বলেছিলেন "অতীত ভুলে গেলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয় না, অন্ধকার হয়ে যাবে"। পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতাইতে গিয়ে বললেন, "আমাকে আমার লক্ষ্য, কর্মপদ্ধতি, দায়বদ্ধতা থেকে কেউ সরিয়ে দিতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।" তুলে ধরলেন নেতাইয়ের শহিদ ও আহত পরিবার, মামলায় সাক্ষীদের ক্ষোভের কথা। রবিবার নেতাইতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ৫২ জনকে সেলাই মেশিন ও ১৭ জনকে বাড়ির চাবি তুলে দিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস নয়, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান হয়। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশকে সেখানে দেখাও যায়নি বলে জানা গিয়েছে।
একদিন আগেই নন্দীগ্রামে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে পুজোর উপহার তুলে দেন বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। এদিকে এই প্রথম পুজোর উপহার তুলে দিতে নিজে গেলেন নেতাই। তিনি জানিয়ে দেন, "অন্য বছরগুলোতে প্রতিনিধি মারফৎ উপহার পাঠিয়ে দিই এবার আমি নিজে এসেছি।" বাড়তি যোগ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ৫২ জন মহিলাকে সেলাই প্রদান ও ১৭ জনকে বাড়ি প্রদান।
তিনি যে নন্দীগ্রাম বা নেতাইয়ের ঘটনা ভোলেননি সেকথা বারে বারে স্মরণ করিয়ে দেন নিজের বক্তৃতায়। শুভেন্দু বলেন, "চন্দ্র, সূর্য, পৃথিবী যতদিন থাকবে শুভেন্দু অধিকারী যতদিন হাঁটাচলা করতে পারবে ততদিন নেতাইয়ের সঙ্গে আছি, থাকব। আমার লক্ষ্য, কর্মপদ্ধতি, দায়বদ্ধতা থেকে কেউ সরিয়ে দিতে পারেনি ভবিষ্যতেও পারবে না।" নিতাইয়ের শহীদ পরিবার, আহত পরিবার, যাঁরা মামলায় সাক্ষ্যদান করছেন তাঁদের মধ্যে যে ক্ষোভ রয়েছে সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, "এর আগে আমি এখানে ক্ষোভ লক্ষ্য করেছি কিন্তু আমার প্রতি তাঁদের কোনওরকম ক্ষোভ নেই। তাঁরা ৮ জনের কর্মসংস্থানের কথা বলেছিলেন। আমি তাদের পাঁচজনের ছোটখাটো কর্মসংস্থান করতে পেরেছি। বাকি তিন জনের কথাও ভাবছি। নেতাইয়ের সঙ্গে আমার আত্মিক, মানসিক ও হৃদয়ের সম্পর্ক।"
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, "দুর্গাপুজো করুন, দুর্গা উৎসব বন্ধ করুন।" নন্দীগ্রামের নায়ক এদিন বলেন, "এবারে উৎসব নয় পুজো করুন। মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার করে পুষ্পাঞ্জলি দিন। মায়ের কাছে আবেদন করুন যাতে করোনা চলে যায়।" পুজোতে তিনি ফের জঙ্গলমহলে আসবেন বলে জানিয়ে দেন শুভেন্দু।
২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম ও নেতাইয়ের ঘটনা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার পিছনে নন্দীগ্রাম ও নেতাইয়ের ঘটনার যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে তত সেখানকার মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। দীর্ঘ বছর হয়ে গেলেও অনেকেই কর্মসংস্থানের দিশা পাননি। কেউ কেউ রাজপ্রাসাদ বানিয়েছেন। কারও কারও পকেট ভরেছে। নন্দীগ্রাম, নেতাইয়ের কথা অন্যরা ভুলে গেলেও সে ক্ষেত্রে তিনি ভুলবেন না সে কথা বারেবারেই স্মরণ করিয়ে দিতে চান শুভেন্দু। তাৎপর্যের বিষয় তা কোনও দলীয় অনুষ্ঠানে নয়। এগারো সালের সেই ঘটনার পর থেকে তিনি নেতাইয়ের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন এবং রেখে চলেন সে কথাই জানিয়ে দেন শুভেন্দু।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন