ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের বেসরকারি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করলেও রাজ্যস্তরের সরকারি অনুষ্ঠানে থাকলেন না পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। অথচ বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপনের বিজ্ঞাপনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে নাম ছিল শুভেন্দুর। এর আগে হুল দিবস পালনেও তাঁরা পৃথক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই ঘটনাই শুভেন্দুর ‘বিদ্রোহী সত্ত্বা’ নিয়ে নতুন জল্পনা উসকে দিল।
ঝাড়গ্রামে হাজির থেকলেও সরকারি মঞ্চে শিশির-পুত্রের গরহাজিরা নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। নতুন কমিটি ঘোষণার সঙ্গেই তৃণমূল কংগ্রেসে পর্যবেক্ষক পদের বিলুপ্তি ঘটেছে। এর আগে ঝাড়গ্রামে পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। পরে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কেও দল তাঁর সঙ্গে জুড়ে দেয়। তখন থেকেই দলের অভ্যন্তরে গুঞ্জন শুরু হয়। হুল দিবসের অনুষ্ঠানেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন না শুভেন্দু অধিকারী। এবারও সেই ধারা অব্যাহত থাকল। এমনকী লকডাউনে পৃথকভাবে নিজ উদ্যোগে ঝাড়গ্রামে ত্রাণ বণ্টন করেছেন সেচ ও পরিবহণমন্ত্রী।
আরও পড়ুন- তৃণমূলে চরমে বিদ্রোহ, ‘মমতার পর দ্বিতীয় ব্যক্তি শুভেন্দুই’!
নুতন কমিটিতে এককভাবে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি শুভেন্দু অধিকারীকে। এনিয়ে দলের নানা স্তরে বিতর্ক দানা বাঁধে। এদিন সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে পৃথক বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে শুধু হাজিরই থাকেননি তিনি, বরং জঙ্গলমহল নিয়ে তাঁর অনুভূতির কথাও বলেছেন ‘নন্দীগ্রামের নায়ক’। এক শহরে দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী দুই অনুষ্ঠানে। এবিষয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, " কোনো মন্তব্য করব না। ওঁরা দুজনই বড় নেতা, এটা নিয়ে বলাটা ঠিক না।" তিনি জবাব দিতে ইতস্তত বোধ করলেও নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মন্তব্য়, জেলায় নয়া উদ্যমে সংগঠন বিস্তারের কাজ চলছে। যখন সর্বস্তরে কমিটি গড়ে কাজ শুরু হয়েছে তখন এমন ঘটনা দলকে বিপাকে ফেলতে পারে। এমনিতেই ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের সব আসনেই দল হেরে বসে রয়েছে বিজেপির কাছে।
এদিন ঝাড়গ্রামে পৌঁছলে শুভেন্দুকে দলীয় পতাকা ছাড়াই বিশাল বাইক মিছিলের মাধ্য়মে স্বাগাত জানানো হয়। এই অনুষ্ঠানে তিনি যে আদিবাসীদের পাশে ছিলেন এবং ভবিষ্য়তেও থাকবেন, সেকথাও ঘোষণা করেন। দশবছর ধরে এই অনুষ্ঠানে আসছেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, "পায়ে হেঁটে বা মোটর সাইকেলে চেপে গোটা জেলা ঘুরেছি। এখানকার মানুষের আন্তরিকতা অভূতপূর্ব। তাই ব্যস্ততা থাকলেও এই অনুষ্ঠানে প্রতি বছর আসি। এখান থেকে তমলুকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে যাব। মনে রাখবেন, যে কোনও প্রয়োজনে শুভেন্দু অধিকারী আপনাদের পাশে থাকবে।" শুধু তাই না ৫০টি ক্লাবকে ক্রীড়া সরঞ্জাম ও ১০টি লোকসংস্কৃতি গাঁওতাকে ধামসা মাদল বিতরণ করেন পরিবহণমন্ত্রী। মন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তিরন্দাজ মণিকা সোরেনকে কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে ও ফুটবলার লক্ষ্মী মান্ডিকে বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে চাকরি করে দেওয়া হবে। সবনিলিয়ে তিনি যে জঙ্গলমহলের লোক সেকথা প্রতি পদক্ষেপে বুঝিয়ে দিয়েছেন শুভন্দু।
শুভেন্দুর সরকারি অনুষ্ঠানে গড়হাজিরা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "কেন আসেননি বলতে পারব না। তবে এলে ভাল হত।" তৃণমূলের নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর রাজ্যস্তরের অনুষ্ঠানে পরিবহণমন্ত্রীর গড়হাজিরা ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন করে জল্পনা উসকে দিল বলে মনে করছে রাজনীতির কারবারিরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন