তৃণমূলের অন্দরে ও বাইরে যখন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে ঠিক তখনই নন্দীগ্রামে এক সভায় তিনি ফের জল্পনা উসকে দিলেন। রাজ্যের মন্ত্রী হয়েও তিনি নন্দীগ্রামকে ভুলে যাননি সেকথা স্মরণ করালেন। শুধু তাই নয়, অন্যদেরও হুঁশিয়ার করলেন। অতীত ভুললে কিন্তু তার ফল কিছুতেই ভাল হতে পারে না। ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন শুভেন্দু। কে বা কাদের উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা নিশিকান্ত মন্ডলের স্মরণসভায় হাজির ছিলেন ভূমিরক্ষা আন্দোলনের কান্ডারী শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, "অনেকেই অতীত ভুলে যান। আমি শুভেন্দু অধিকারী সবসময় বলি যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেটা দিয়ে শেষ করব। অতীত যাঁরা ভুলে যান তাঁদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে না। তাঁদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হবে। এটাই চিরন্তন সত্য। নিশিকান্ত মন্ডলের অসম্পূর্ণ কাজ পূরণ করব। নিশিকান্ত মন্ডল না থাকলে এই লড়াই জিততে পারতাম না।"
নন্দীগ্রামের নায়কের এই মন্তব্যে রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে। নন্দীগ্রামই বাম আমলে তৃণমূলকে রাজ্যে শক্ত রাজনৈতিক জমি দিয়েছিল তা নিয়ে কোনও বিতর্কের অবকাশ নেই। সিঙ্গুর আন্দোলনের থেকেও নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সফলতা অনেকটাই বেশি ছিল বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। এককথায় বাংলার রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল নন্দীগ্রামের জমি রক্ষা আন্দোলন। শুভেন্দুর মুখে অতীত ভুলে যাওয়ার কথা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে অভিজ্ঞমহল। এদিকে ২৩ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন ঘোষিত কমিটিতে একক ভাবে শুভেন্দু অধিকারী কোনও দায়িত্ব পাননি। তা নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের একাংশ সোচ্চার হয়েছিলেন। তারপর এদিন শুভেন্দুর এই মন্তব্য নিয়ে জোর চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে।
নন্দীগ্রামেই আমফান ঝড়ের ক্ষতিপূরণে দুর্নীতির অভিযোগে সব থেকে বেশি সংখ্যক নেতৃত্বকে শোকজ বা সাসপেন্ড করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন শুভেন্দু বলেন, "যতটা সম্ভব আমরা চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। কখনও ১০০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ কেউ করতে পারে না পারবে না। যেটুকু ফাঁক-ফোকর ছিল, বঞ্চিত হয়েছেন তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।" করোনা প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের স্বাস্থ্য পরিষেবার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তুলনা টানেন দেশ ও রাজ্যের সঙ্গে। তিনি বলেন, "এই দেশ বা রাজ্যের মতই জেলায় করোনা আক্রান্ত অনেক। কিন্তু আরোগ্য প্রাপ্তির হার দেশে যখন ৮০ ভাগ, রাজ্যে ৮৬ ভাগ তখন এখানে ৮৮ ভাগ। আমাদের জেলায় মৃতের হার.৮৩ অর্থাৎ এক শতাংশেরও নীচে। সচেতনতার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।"
তিনি যে নন্দীগ্রামকে ভুলে যাননি, অতীত তিনি ভুলে যান না সেকথাই এই স্মরণ সভায় অন্যদের মনে করিয়ে দিতে চাইলেন। শুভেন্দু অধিকারী স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ২০০৬ সালে প্রথম নন্দীগ্রামে আসার কথাও বলেন। নিশিকান্ত মন্ডলের আহ্বানে তিনি এখানে এসেছিলেন সেকথাও স্মরণ করেন তিনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন