শীতেও বাংলায় রাজনীতির উত্তাপ তুঙ্গে। শনিবার মেদিনীপুরে তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অমিত শাহের দাবিকেও 'অসত্য' বলে কটাক্ষ করল তৃণমূল। এছাড়াও পোস্টার থেকে বিশ্বাসঘাতক ইস্যুতেও মুখ খুলেছেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
পোস্টারে রবি ঠাকুরের উপরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছবি ঘিরে ফের বিজেপিকে নিশানা করল তৃণমূল। গোটা ঘটনায় পদ্ম শিবিরের মানসিকতার নিন্দা করেন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। একই সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর দলবদল ইস্যুতে 'বিশ্বাসঘাতক' বিতর্ক উসকে দলত্যাগীদের মীরজাফর, জগৎ শেঠদের সঙ্গে তুলনা করেন সুব্রতবাবু। শনিবার অমিত শাহের বক্তব্যের অসঙ্গতিও তুলে ধরেন তিনি।
দু'দিন আগেই অমিত শাহের ছবির নিচে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি দেওয়া পোস্টার পড়েছিল বোলপুরে। সেই রোস্টারের একেবারে নীচে ছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরার ছবিও। কেন ব্যানারে অমিত শাহর নিচে রবীন্দ্রনাথের স্থান? এই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল আস্রমবাসীরা। টুইটে প্রতিবাদ জানিয়ে প্রস্ন তোলে তৃণমূল। সেই আবেগকে হাতিয়ার করে এদিন দিনভর প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদ। জোড়াসাকোতে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন টিএমসিপ সদস্যরা।
পাশাপাশি বিজেপিকে বিঁধে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, “যাঁরা বাংলার সংস্কৃতি বোঝেন না, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মান দেয় না, তাঁরা বাংলা দখলের স্বপ দেখেন কীভাবে। এই ঘটনায় গোটা বাংলা মর্মাহত।”
পাশাপাশি তিনি বলেন, শনিবারের সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী সম্পর্কে মিথ্যা বলেছেন অমিত শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে কীকরে শুভেন্দু অধিকারীর দলবদল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন 'দিদি'। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী বলেন, 'মমতা কংগ্রেস ছেড়ে অন্য দলে নয়, নতুন দল তৈরি করেছিলেন। না জেনেই মিথ্যা বলছেন শাহ।'
এছাড়াও, অমিত শাহয়ের আরও অভিযোগ, ‘বাংলার মানুষকে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’ টুইটে ডেরেক ও সাংবাদিক বৈঠকে সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আসলে তা নয়, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পর দু’বছর আগে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প বাংলায় শুরু হয়েছিল। ‘স্বাস্থ্যসাথী’র অধীনে ১.৪ কোটি পরিবার বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা পেয়েছে। বাড়ির মেয়েদের নামে দেওয়া এই ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের মাধ্যমে আরও ভাল ভাল পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।’
অমিত শাহ আরও বলেছেন যে কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘পিএম কিসান’ থেকে কৃষকদের বঞ্চিত করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু বাস্তব হিসেবে তৃণমূলের দাবি, ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের আওতায় বাংলার কৃষকরা একর প্রতি বার্ষিক ৫ হাজার টাকা সহায়তা পান। কিন্তু ‘পিএম কিসান’–এ একর প্রতি মাত্র ১২১৪ টাকা দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ‘শস্যবিমা’র ক্ষেত্রে কৃষকদের হয়ে সম্পূর্ণ প্রিমিয়াম দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি করেছিলেন, ‘দেড় বছরে ৩০০ বিজেপি কর্মী নিহত হয়েছেন।’ এর জবাবে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এর থেকে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না।’ তৃণমূলের দাবি, নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বহু বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এমনকী আত্মহত্যার মৃত্যুকেও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে চালানো হচ্ছে এবং এই সংখ্যাতত্ত্বকে আরও ভুলভাবে মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
লকডাউনে রাজ্যকে কেন্দ্রের খাদ্য শস্য পাঠানোর দাবি ঘিরে এদিন সুব্রতবাবু বলেছেন, 'খাদ্যসাথী’ কর্মসূচির আওতায় ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি মানুষ যাতে বিনামূল্যে রেশন পায় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন