কাঁথির অধিকারী পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের চাপানউতোর আরও তীব্র হল। এবার অবশ্য রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে নয়। তৃণমূলের তোপের মুখে অধিকারী পরিবারের দুই সাংসদ শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারী। খাতায়-কলমে তৃণমূলের হলেও যাঁরা বহুদিন আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
এবার এই দুই সাংসদ অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের গন্ডগোলের কারণ উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন। যেখানে বিরোধী ভাবমূর্তি বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা থেকে ভোট না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঘাসফুল শিবির। ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাসভবনে সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিতে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে বেশিরভাগ তৃণমূলের সাংসদরাই উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটদানে বিরত থাকার কথা জানিয়েছিলেন। দলের ৩৯ জন সাংসদকেই হুইপ জারি করে সেকথা জানিয়েও দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু, শনিবার ভোটের দিন দেখা যায় সাংসদ বাবা-ছেলে শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারী ভোট দিয়েছেন। এতে দলের নিরপেক্ষ অবস্থান কার্যত ধাক্কা খেয়েছে। তাতে আরও চটেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
সেকথা মাথায় রেখেই কার্যত শোকজ নোটিস জারি করা হল সাংসদ পিতা-পুত্রকে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ উপেক্ষা করে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়াকে দলবিরোধী কার্যকলাপ হিসেবে মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই কারণে কাঁথির অধিকারী পরিবারের ওই দুই সাংসদকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠালেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, শনিবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঠিক দু'দিন আগে বৃহস্পতিবার ওই দুই অধিকারী সাংসদকে চিঠি দিয়েছিল দল। সেই চিঠিতে স্পষ্টই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে তাঁরা ভোটদানে বিরত থাকেন। কারণ, দলগতভাবে তৃণমূল কংগ্রেস ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে। কিন্তু, সেই নির্দেশ মানেননি খাতায়-কলমে তৃণমূলে থাকা ওই দুই সাংসদ।
আরও পড়ুন- মাথায় ২০২৪-এর লোকসভা ভোট, ইমেজ বদলানো ‘যুববাহিনী’কে মাঠ নামাচ্ছেন যোগী
দুই সাংসদকে আলাদাভাবে পাঠানো শোকজ নোটিসে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, 'আপনাকে ৪ আগস্টই জানানো হয়েছিল যে দলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদরা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকবেন। কিন্তু, আমরা লক্ষ্য করেছি যে আপনি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। লিখিতভাবে নির্দেশ দেওয়ার পরও কেন তা ভঙ্গ করলেন, কারণ জানাতে হবে।'
এর আগে তৃণমূলের অন্যান্য সাংসদরা কলকাতায় ভোট দিলেও, দলকে না-জানিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে দিল্লিতে গিয়েছিলেন শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারী। তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই অবশ্য শিশির অধিকারীর সাংসদ পদ খারিজ করার জন্য লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু, সেই আবেদনের এখনও কোনও ফয়সালা হয়নি।
এমন টানাপোড়েনের মধ্যেই ফের পরপর রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে অধিকারী পরিবারের দুই সাংসদের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাত চরমে উঠল। এই ব্যাপারে শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারী সংবাদমাধ্যমে তাঁদের মত না-জানালেও তাঁদের ঘনিষ্ঠদের সূত্রে খবর, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদান নিয়ে কোনও হুইপ জারি করা যায় না। সেই কারণেই দুই সাংসদ তাঁদের ইচ্ছেমতো ভোট দিয়েছেন। যা নাকি বেআইনি নয়।