জোড়া-ফুল ছেড়ে পদ্ম-ফুলের পতাকা হাতে নিয়েই সনাতনীদের কথা বারে বারে উঠে এসেছে শুভেন্দু অধিকারীর মুখে। শনিবার বঙ্গ বিজেপির চিন্তন বৈঠকে ছিলেন না বিরোধী দলনেতা। কিন্তু, উঠল সনাতনী প্রসঙ্গ। এবার সনাতনীদের কথা বললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সনাতনী প্রসঙ্গে টেনেই বাংলায় 'ধর্ম-যুদ্ধে'র ডাক দিলেন বালুরঘাটের সাংসদ।
একুশের ভোটে বাংলায় প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে গেরুয়া বাহিনী। পদ্ম নেতৃত্বের বেশিরভাগই মনে করেন বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের অধিকাংশই হিন্দু সনাতনী সম্প্রদায়ের। তার আগে নন্দীগ্রামের প্রচারপর্বেও শুভেন্দু সনাতনীদের ভোটেই বাজিমাতের ঘোষণা করেছিলেন। শুভেন্দু জিতলেও, বিজেপির ফল শোচনীয় হয়। আর সদ্য সমাপ্ত পুরভোটে ধরাশায়ী গেরুয়া শিবির। সঙ্গে দলে বেড়েছে কোন্দল। ফলে তড়িঘড়ি চিন্তন বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা যে, এই বৈঠকেই স্পষ্ট হল যে, সনাতনীদের কথা বলে সুকান্তবাবুর 'ধর্ম যুদ্ধে'র ডাক আসলে হিন্দুদের জোটবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান।
বাংলায় শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াইকে 'ধর্ম যুদ্ধ' বলে দেগে দিতে উদ্যোগী রাজ্য বিজেপি। এদিন জাতীয় গ্রন্থাগারে দলের চিন্তন বৈঠকে সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, 'সামনেই ধর্মযুদ্ধ রয়েছে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা এখনও পূরন হয়নি। আর তা সত্যি করতে এই ধর্মযুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ধর্ম যুদ্ধে কেউ কাউকে আহ্বান জানায় না। এগিয়ে এসে লড়াইতে যোগ দিতে হয়।' পুরযুদ্ধে দলের শোচনীয় অবস্থার জন্য তৃণমূলের 'সন্ত্রাস'কেই দায়ী করেছেন বঙ্গ বিজেপির প্রধান। তাঁর কথায়, 'বাংলায় ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। রাজ্যে অলিখিত জরুরি অবস্থা চলছে।' কিন্তু লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন তিনি।
দল বড় হয়েছে। কিন্তু, রাজ্য বিজেপির অন্দরে দ্বন্দ্ব প্রকট। রাজ্য ও জেলা কমিটি গঠনেই তা স্পষ্ট। এই অবস্থায় দলের 'বিক্ষুব্ধ'দের প্রতিও বার্তা দিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। বলেছেন, 'দল কোনও ব্যক্তির নয়। দল টিম ওয়ার্ক। সেই টিমের সিদ্ধান্ত কোনও সময়ে ভুল হয় আবার কখনও ঠিক হয়। আমরা সাংগঠনিক দল। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটি দল নিয়েছে মনে করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচানোর তাগিদে সবাইকে একসঙ্গে কাজের বার্তা দিলেন বঙ্গ বিজেপির মসিহা। আর তা করতে পারলেই যে, ২০২৬ সালে বাংলার ক্ষমতায় বিজেপি আসবে বলেও দাবি করেছেন সুকান্ত মজুমদার।
এদিনের বৈঠকে দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, অগ্নিমিত্রা পাল, অমিতাভ মজুমদার, এবং অমিত মালব্যরা মঞ্চে জায়গা পেলেও, দর্শক আসনে বসেই কাটাতে হয়েছে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। আসেননি শুভেন্দু-অর্জুন সিংরা। জরুরি কাজ থাকায় বিরোধী দলনেতা নাকি আগেই জানিয়ে দেন তিনি চিন্তন বৈঠকে থাকতে পারবেন না। তবে, তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে গেরুয়া দলের অন্দরেই নানা গুঞ্জন চলছে।