"তৃণমূলে ছিলাম, তৃণমূলের আছি।" জানিয়ে দিলেন বিজেপি নেতা পূর্ব বর্ধমানের সাংসদ সুনীল মণ্ডল। বিজেপিতে যোগ দেওয়া পূর্ব বর্ধমানের ঘাসফুলের সাংসদ সুনীল মণ্ডল কয়েক দিন আগেই দিল্লিতে তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের বাসভবনে গিয়েছিলেন। সেদিন রাতে তাঁদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক হয়। তখনই সুনীলের তৃণমূলে ফেরা অনেকটাই জোরালো হয়েছিল।
সোমবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সুনীল মণ্ডল বলেন, "তৃণমূলে ছিলাম, তৃণমূলে আছি। তৃণমূলের হয়েই কাজ করব।" কেন বিজেপি ছাড়ছেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "এ বিষয় নিয়ে কোনও প্রকার মন্তব্য করতে চাই না।"
উল্লেখ্য, রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর জনসভায় বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন এই তৃণমূল সাংসদ। জোড়া-ফুলে থেকে কাজ করা যাচ্ছে না বলে সেই সময় দাবি করেন তিনি। কিন্তু একুশের নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ফল ভালো হয়নি। এরপরই অবশ্য বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে 'বেসুরো' শোনা গিয়েছে তাঁকে। শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখালেও ভোটের পরে তাঁর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দেন বর্ধমান পূর্বের সাংসদ।
বিধানসভা ভোটের পর চলতি বছর জুন মাসে সুনীল মণ্ডল বলেছিলেন যে, "ভেবেছিলাম বিজেপি সাংগঠনিক ভাবে বড় দল। কিন্তু সেরকম ভাবে পাচ্ছি না। দলে যোগনকারীদের কোনও কাজের জায়গা দেওয়া হচ্ছে না।" অর্থাৎ, দলত্যাগীদের যোগ্য সম্মান না দেওয়াতেই বঙ্গে বিজেপির এই পরিণতি বলে দাবি সাংসদের। পাশাপাশি শুভেন্দুর বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ তোলেন সুনীল মণ্ডল। তাঁর কথায়, "আমায় যে যে কথা দিয়েছিল, একটা কথা মানেনি। দাদা ভাই হয়ে এক সঙ্গে কাজ করব বলেছিল। কিন্তু কথা রাখেনি। আমার সঙ্গে এখন ওঁর আর সম্পর্ক নেই।"
আরও পড়ুন- চ্যালেঞ্জ ২০২৪, তার আগেই বেসামাল বঙ্গ বিজেপি, দলে কলহ প্রকট
কিন্তু এসবের মধ্যেই বর্ধমান পূর্বের সাংসদ পদ বাতিল করার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন। যে আবেদন এখনও বিচারাধীন।
২০১১ সালে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রতীকে গলসির বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন সুনীল মণ্ডল। কিন্তু পরে মুকুল রায়ের হাত ধরেই তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। ২০১৪-তে বর্ধমান পূর্ব থেকে তৃণমূল সাংসদ নির্বাচিত হন। যদিও ২০১৭-তে মুকুল জোড়া-ফুল ছাড়লেও তৃণমূল ত্যাগ করেননি সুনীল মণ্ডল। ২০১৯ সালের লোকসভাতেও একই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের হয়েই ফের জয়ী হয়েছিলেন তিনি।
২০১৯ লোকসভায় বঙ্গ বিজেপির উত্থান ছিল চমকপ্রদ। সেই রেশ ধরেই বাংলাজুড়ে গেরুয়া ঝড় লক্ষ্য করা যায়। মোদী-শাহ জুটির পাখির চোখ করে এই রাজ্যকে। শুভেন্দু সহ তৃণমূলের একাধিক হেভিওয়েট গেরুয়া হিড়িকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখান। সেই তালিকায় ছিলেন সুনীল মণ্ডলও। ভোটের পর অবশ্য উল্টো ছবি ধরা পড়ে। মুকুল রায় বিজেপি বিধায়ক হলেও তৃণমূলে ফিরে যান। তারপরই দলত্যাগীদের অনেকেই ঘরওয়াপসিতে মরিয়া। চিঠি দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমোকে। ভোলবদল করেছেন সুনীল মণ্ডলও। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে সাসংদ পদ ধরে রাখতেই মুকুল পথের পথিক সুনীল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন