মহারাষ্ট্রের ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল বিজেপি। চেষ্টার কসুর করেননি প্রধানমন্ত্রী মোদীও। এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের কথাতেই তা স্পষ্ট হচ্ছে। এবিপি মাজাকে এক সাক্ষাৎকারে পাওয়ার বলেন, 'একসঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু আমি তা নাকচ করে দিয়েছি। একই সঙ্গে মেয়ে সুপ্রিয়া সুলেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাও প্রত্যাখ্যান করেছি।' প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর গোপন কথোপকথন ফাঁস করে দেন মহারাষ্ট্র রাজনীতির চাণক্য।
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে যখন তীব্র টানাপোড়েন চলছে তখন গত ২০-শে নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সংসদের অফিসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন এনসিপি প্রাধান পাওয়ার। মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর পাওয়ার জানিয়েছিলেন, কৃষকদের দুর্দশা নিয়ে আলোচনা করতেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছিলেন। টিভি সাক্ষাৎকারে সেই দাবিতে অটুট ছিলেন তিনি। কৃষদের বিষয়ে আলোচনা শেষে মহারাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা হয়। সেই সময়ই রাজ্যে বিজেপি-এনসিপি এক সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী দেন বলে দাবি পাওয়ারের।
আরও পড়ুন: আমরা আমাদের রাজনীতি করব: শরদ পাওয়ার
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব নিয়ে কী বলেছেন শরদ পাওয়ার?
সোমবার এবিপি মাজাকে সাক্ষাৎকার দেন মহারাষ্ট্রের মহা বিকাশ আগারি জোটের ভর কেন্দ্র শরদ পাওয়ার। জোট সরকার গঠন প্রক্রিয়ার মাঝেই গত মাসের ২০ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। যা নিয়ে উত্তাল হয় মারাঠা রাজনীতি। সেই সময় পাওয়ার জানিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের কৃষকদের দুর্দশার অবস্থার কথা তুলে ধরতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। কিন্তু তারপর যা বললেন, তা রীতিমত মারাঠা রাজ্যে সরকার গড়তে বিজেপির মরিয়া চেষ্টার তথ্য ফাঁস বলাই য়ায়। এনসিপি প্রধান বলেন, 'আলোচনার শেষ প্রধানমন্ত্রী আমাকে অপেক্ষা করতে বলেন। পরে প্রস্তাব দেন এক সঙ্গে কাজ করার। কিন্তু আমি তা নাকচ করে দিয়েছি। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের জন্যই তা সম্ভব নয় বলে তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলাম। পরে সুপ্রিয়া সুলেকে মন্ত্রীর করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু, সেই প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছি।' উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান অসুবিধা কোথায়? তিনি বলেন, 'উন্নয় থেকে কৃষকদের সমস্যা সমাধান, শিল্পায়ণ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এক। তাহলে সমস্যা কোথায়? শরদ পাওয়ারের দাবি, 'দেশের উন্নয়নে এক সঙ্গে আমাদের কাজ করা উচিত। আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বলে জানান মোদী।'
জবাবে এনসিপি প্রধান প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, 'জাতীয় স্বার্থে মোদী সরকারের বিরোধিতা এনসিপি করবে না। কিন্তু এনসিপি মূলত মহারাষ্ট্রের একটি ছোট্ট রাজনৈতিক দল। ফলে সেই বিষয়টিও বিবেচনা করেত হবে।' সাক্ষাৎকারে দাবি শরদ পাওয়ারের।
প্রধানমন্ত্রী কি শরদ পাওয়ারকে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন? বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের উত্তর, 'না এই ধরণের কোনও প্রস্তাব আসেননি।'
আরও পড়ুন: ‘ফড়নবিশের দ্বিতীয়বারের শপথ পরিকল্পিত নাটক’, দাবি বিজেপি সাংসদের
ভাইপো অজিত পাওয়ারের সমর্থনেই ৮০ ঘন্টার জন্য সরকার গঠন করতে পেরেছিলেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। বড় পাওয়ারের মতে সেই সময় অনেকেই ভেবেছিল তাঁর সমর্থনেই ওই কাজ করা হয়েছে। কিন্তু, পরে উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে এনসিপির অবস্থান স্পষ্ট করা হলে নিজের দোষ বুঝতে পেরেছিলেন অজিত। তারপরই উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে ফের দলের লাইনে ফিরে আসেন অজিত পাওয়ার। ক্ষমাও চান কাকা শরদ পাওয়ারের কাছে। এনসিপি প্রধান বলেন, 'খুব সচেতনভাবেই আমি ওকে ঠাকরের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম।'
এনসিপি প্রধানের দাবি ঘিরে নানা রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতা সুধীর মুঙ্গাটিওয়ার পাওয়ারের মন্তব্যকে 'দুর্ভাগ্যজনক' বলে জানান। তাঁর কথায়, 'প্রধানমন্ত্রী মোদী ও শরদ পাওয়ারের আলোচনা প্রকাশ্যে চলে আসা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে এর সত্যতা বা অসত্যতা নিয়ে আমি কিছু বলেতে পারব না।'
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বকলমে শরদ বুঝিয়ে দিলেন মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে আগাড়ি জোট, উদ্ধব সরকার ও এনসিপির রাশ তাঁর নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
Read the full story in English