বিপ্লব দেবের জুতোয় পা গলিয়ে ত্রিপুরার কুর্সিতে বসেছিলেন। সেই মানিক সাহার উপরই ফের ভরসা রাখল বিজেপি। দ্বিতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন মানিক। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা উত্তর-পূর্বে গণতান্ত্রিক জোটের মাথা হিমন্ত বিশ্বশর্মা রবিবার ত্রিপুরায় গিয়ে মানিক এবং শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখনই ত্রিপুরার মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। দলীয় সূত্রে খবর, হিমন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করেন। তার পরই মানিকের নামে সিলমোহর পড়ে।
বিধানসভা নির্বাচনে মানিকের নেতৃত্বেই দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরে বিজেপি। ১০ মাস আগেই বিপ্লব দেবের পরিবর্তে ত্রিপুরার কুর্সিতে বসেন তিনি। বিপ্লব চার বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থা হারান। রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির জেরে তাঁর ঘাড়ে কোপ পড়ে। তবে মানিকের এবারের লড়াইটা আরও কঠিন ছিল। দলের মধ্যেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিকের নাম উঠে আসছিল মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য। তিনিও ভোটে জিতেছেন। কিন্তু মানিকের উপরই ভরসা রেখেছে হাইকমান্ড।
মানিক কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা আশিস সাহার সঙ্গে প্রেস্টিজের লড়াইয়ে খুব কম ব্যবধানে জিতেছেন। মাত্র ১২৫৭ ভোটে। ৬৯ বছরের চিকিৎসক, আদ্যোপান্ত ভদ্রলোক ভাবমূর্তির মানিক সাহা কিন্তু বিপ্লব দেবের অনুগামী নন। বিজেপিতে এসেছেন ২০১৬ সালে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছনোর জেরে দলের অনেক পুরনো নেতারই চক্ষুশূল হয়েছেন। ২০১৮ সালে পৃষ্ঠপ্রমুখ হওয়ার পর ২০১৯ সালে ত্রিপুরা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির কুর্সিতেও বসেন মানিক।
আরও পড়ুন পাটিগণিতের হিসেবে গড়মিলেই ত্রিপুরায় হারতে হয়েছে, সাফ কথা সিপিএমের
রকেট গতিতে উত্থানের জেরে শেষে বিপ্লবের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছিলেন মানিক। বিজেপির এক ব্যক্তি এক পদ নীতির জেরে বিপ্লবকে যখন ত্রিপুরা বিজেপির সভাপতি পদ থেকে ২০২০ সালে সরিয়ে দেওয়া হয়, সেই জায়গায় বসেন মানিক। তার পর বিপ্লবকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে গত বছর রাজ্যসভায় পাঠানোর পর মুখ্যমন্ত্রীর পদেও বসেন মানিক।
বছর দুয়েক ধরে রাজ্যে ড্যামেজ কন্ট্রোলের প্রধান ব্যক্তি হয়ে ওঠেন মানিক। তাই বিধানসভা নির্বাচনের ১০ মাস আগে মানিককে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসানোর ঝুঁকি নেয় দল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অল্প সময়ে ক্ষমতার অলিন্দে থেকে মানিক রাজ্যের মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসে সমস্ত নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন রাজ্যের জনপ্রিয় এই বিজেপি নেতা।