২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই সাংগঠনিক পরিবর্তন করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সমন্বয় সমিতির প্রথম বৈঠকেই গড়হাজির নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। এদিন একইসঙ্গে ২১ জনের ওই সমিতির আরও তিন সদস্য হাজির হননি। তবে শুভেন্দুর গড়হাজিরা নিয়ে দলে ফের নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে একাধিক দলীয় ভার্চুয়াল বৈঠকে হাজির থাকেননি এই তরুণতুর্কি নেতা। তৃণমূল সূত্রে খবর, তিনি দলকে বলেছেন বিশেষ অসুবিধার জন্য এদিন হাজির হতে পারবেন না। পর পর এভাবে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে হাজির না থাকলে জল্পনা বাড়তে বাধ্য বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
এর আগেও অনেক দলীয় বৈঠকে গড়হাজির থেকেছেন শুভেন্দু অধিকারী। নেতাজি ইন্ডোরের 'বাংলার গর্ব মমতা' ইভেন্ট-এ হাজির ছিলেন না শুভেন্দু। তখনও জল্পনা ছড়িয়েছিল। শুভেন্দুর ঘনিষ্ট মহল সূত্রের খবর, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের 'পাঠচক্রে' হাজির থাকতে রাজি নয় শুভেন্দু। ময়দানে থেকেই দলের সংগঠন মজবুত করা যায় বলেই অভিমত নন্দীগ্রামের বিধায়কের, এমনটাই জানিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি লকডাউন চলাকালীন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেক ভার্চুয়াল বৈঠকেও হাজির থাকেননি তিনি।
২৩ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের সর্বস্তরে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে। শুভেন্দুকে দলের শীর্ষ স্তরের তিনটে কমিটিতে রাখা হয়েছে। কিন্তু দল কৌশলগত ভাবে পর্যবেক্ষক পদের অবলুপ্তি ঘটিয়েছে। রাজনীতির কারিবারিরা মনে করেন, এর ফলে দলের অন্যদের থেকে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্র সব থেকে কমে গিয়েছে শুভেন্দুর। যার ফলে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগও ধাক্কা খেল। কার্যত তাঁর ক্ষমতা ক্ষর্ব হয়েছে। দল একক ভাবে শুভেন্দুকে কোনও সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়নি নতুন ঘোষণায়। যার দরুন তার অনুগামীরা ক্ষোভপ্রকাশও করেছেন। তবে শুভেন্দু নিজে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি।
এদিকে শুক্রবার ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের ২১ জনের সমন্বয় সমিতির প্রথম বৈঠক। এই বৈঠকে শুভেন্দু ছাড়া হাজির ছিলেন না দেবু টুডু, হিতেন বর্মণ ও মৃগাঙ্ক মাহাত। দেবু টুডু করোনায় আক্রান্ত তাই আইসোলেশনে আছেন, অন্য দুজন না আসার কারণ দর্শিয়েছেনন। তবে সব গুঞ্জন শুভেন্দুকে নিয়ে। তাঁর গড় হাজিরা নিয়ে দল যাই মন্তব্য করুক রাজনৈতিক মহলে বড় ধরনের জল্পনা উসকে দিয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, একদিকে দলের গুরুত্বপূর্ণ নানা বৈঠকে যোগ না দেওয়া এবং তারওপর তাঁর দায়-দায়িত্ব কাটছাট করেছে দল। তা নিয়ে চর্চা হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। যদিও এবিষয়ে শুভেন্দুর কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, বৈঠকে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী জানিয়ে দেন, "জেলা সভাপতি, চেয়ারম্যান ও কো-অর্ডিনেটরদের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। কারও উপরে কেউ না, কেউ কারও থেকে বড় নয়। সকলকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হওয়া বাঞ্ছনীয়। নিজস্ব চিন্তাভাবনা থাকলে দলকে লিখিত ভাবে জানাবেন।" এই বৈঠকে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাজির ছিলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। তবে শুভেন্দু দলের সমন্বয় সমিতির প্রথম বৈঠকে হাজির না থাকায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যেও জল্পনা শুরু হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন