যে ধাত্রীভূমিকে সোপান করে বাংলার ক্ষমতায় এসেছিল মমতা সরকার, একুশের মহাযুদ্ধের আগে সেই নন্দীগ্রামকে কেন্দ্র করেই এবার তৃণমূলের অন্দরে সংঘাতের সূচনা হয়ে গেল শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে। ‘‘এই পবিত্র জায়গা রাজনীতির জন্য় নয়। ১৩ বছর পর নন্দীগ্রামকে মনে পড়েছে? ভোটের পর আসবেন তো?’’ নাম না করে দলীয় নেতৃত্বের একাংশকেই এ ভাষায় কটাক্ষ করলেন কাঁথির অধিকারী পরিবারের অন্য়তম প্রধান মুখ শুভেন্দু, এমনটাই মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। উল্লেখ্য়, আজই নন্দীগ্রামে বিকেলে পাল্টা সভা রয়েছে তৃণমূলের। যেখানে থাকার কথা ফিরহাদ হাকিম, দোলা সেনদের।
ঠিক কী বার্তা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী?
নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্য়ানারে সভায় শুভেন্দুর তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা, ‘‘আমি নন্দীগ্রামে নতুন লোক নই, চেনা বামুনের পৈতের দরকার নেই। সবসময় আপনাদের পাশে রয়েছি’’। এরপরই তৃণমূলের অন্য়তম প্রধান সৈনিকের ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য়, ‘‘ক্ষমতা নিয়ে কোনও কিছু করিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করেছি। এই আন্দোলন শুভেন্দু অধিকারীর আন্দোলন নয়, স্বত:স্ফূর্ত লোকের আন্দোলন’’। এদিন, শুভেন্দুর গলায় ’ভারতমাতা জিন্দাবাদ’ স্লোগান শোনা গিয়েছে, যা অত্য়ন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে ব্য়াখ্য়া রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
আরও পড়ুন: ‘শুভেন্দু যোগাযোগ করলে, আলোচনা করব’, বার্তা বিজেপি নেতার
শুভেন্দুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জোর জল্পনা বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে। এদিনও তৃণমূলনেত্রীর নাম নেননি শুভেন্দু। এদিন বরং আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিকল্পনার আভাস দিয়ে শুভেন্দু বললেন, ‘‘রাজনৈতিক প্ল্য়াটফর্মে থেকে রাজনৈতিক কথা বলব। কোন রাস্তায় গর্ত, কোথায় হোঁচট খাঁচ্ছি, কোন রাস্তায় হাঁটলে মসৃণ ভাবে চলব, সেটা তো রাজনৈতিক মঞ্চে বলব। পবিত্র প্ল্য়াটফর্মে রাজনীতি করি না, করব না। রাজনীতির মঞ্চে দেখা হবে। লড়াইয়ের মাঠে দেখা হবে। শুভেন্দু ভয় পায় না’’।
নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে কোন রাজনৈতিক ইঙ্গিত দিতে চাইলেন শুভেন্দু অধিকারী? তাহলে কি একুশের নির্বাচনের আগেই নয়া চমক দিতে পারেন রাজ্য়ের পরিবহণমন্ত্রী? রাজনৈতিক মহলে শুভেন্দুকে ঘিরে জল্পনা আরও জোরালো হল বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
অন্য়দিকে, এদিন বিকেলে নন্দীগ্রামে পাল্টা সভা করছে তৃণমূল। একদিকে সকালে শুভেন্দুর সভা, আর বিকেলে তৃণমূলের সভা, যা ঘিরে সরগরম বঙ্গ রাজনীতি। নাম না করে এ প্রসঙ্গে শুভেন্দুর সাফ জবাব, ‘‘এই সভা নতুন সভা নয়, ১৩ বছরের সভা। নতুন কর্মসূচি নয়, ১৩ বছরের কর্মসূচি’’।
নন্দীগ্রামে অত্য়াচারের কাহিনী তুলে ধরে ‘বাংলার সুশীল সমাজে’র অবদানের প্রসঙ্গ টেনে মহাশ্বেতা দেবী, শুভাপ্রসন্ন, পল্লব কীর্তনীয়া, অর্পিতা ঘোষদের নাম নেন শুভেন্দু। সভার শেষে শুভেন্দুর ‘জয় জয় নন্দীগ্রাম’ স্লোগানে মুখরিত হয়েছে গোটা এলাকা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন