বিজেপিতে যোগ দিয়েই তৃণমূল যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ডাক দিলেন 'তোলাবাজ ভাইপো হঠাও'। শাসক দলে অভিষেকের নেতৃত্ব নিয়েই শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরোধ বলে শোনা গিয়েছিল। শুভেন্দু অধিকারীর এ দিনের ডাক থেকেই তা স্পষ্ট হল।
শুধু অভিষেককেই নয়, দলত্যাগীদের নেত্রীর 'বিশ্বাঘাতক' বলেছেন। ১৯৯৮ সালে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের জোটের প্রসঙ্গ তুলে এ দিন তার জবাব দেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, 'সেদিন বাজপেয়ীজির পা না ছুঁয়ে বেরনো যেত না। কে কার সহ্গে তাহলে প্রথম জোট করেছিল?'। তাঁর সাফ ঘোষণা, 'গায়েত্রী দেবী আমার মা। তার বাইরে যদি মা বলতেই হয় তাহলে বিবেকান্দের কথা অনুসারে দেশ মাকে ভারত মাতা বলব।' তোপ দাগেন 'বহিরাগ' নিয়েও। একই সঙ্গে অমিত শাহকে 'বড় ভাই' বলে সম্বোধন করেছেন শুভেন্দু।
শুভেন্দু অধিকারী কবে তৃণমূল ছাড়বেন- তা নিয়ে গত কয়েকদিনে জল্পনা তুঙ্গে ছিল। দলে যে নন্দীগ্রামের বিধায়ককে রাখা যাবে না তা ক্রমশই বুঝতে পারছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যাও। তাই মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়েই মমতা বলেছিলেন দলের জন্মলগ্নের অব্যবহিত পরেই কাঁথিতে লড়েছিল তৃণমূল। সেই ভোটে দ্বিতীয় হয়েছিল দল। এই ইস্যুতেও প্রাক্তন দলের নেত্রীকে তুলোধনা করেন শুভেন্দু। রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, 'নেত্রীর ইঙ্গিত ছিল অধিকারী পরিবার। আমি বলছি সেবারের মত এবারও আপনারা দ্বিতীয় হবেন। বাংলায় পদ্ম ফুটবে।'
বাংলা দখলে মরিয়া গেরুয়া শিবির। দলের একঝাঁক হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বাংলায় সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ইস্যুতেই বাঙালি আবেগকে উস্কে ভিন রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বকে 'বহিরাগত' বলে দেগে দিচ্ছি তৃণমূল। যা নস্যাৎ করে এ দিন জোড়া-ফুল শিবিরকে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, 'সবাইকেই বহিরাগত বলা হচ্ছে। আগেও বলেছি, আজও বলছি। বহুত্ববাদ নষ্ট হতে দেব না। আমরা আগে ভারতীয়, পরে বাঙালি।'
টেট থেকে বেকারত্ব, তোলাবাজি, দুর্নীতি থেকে রাজনৈতিক দাদাগিরি- একাধিক ইস্যুতে এ দিন মমতা সরকার ও তৃণমূলকে নিশানা করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, 'কেন্দ্র-রাজ্যে এক দলের সরকার না থাকলে উন্নয়ন হবে না। এতদিন সেই প্রমাণই পেয়েছি।' কেন এতদিন কেন্দ্রীয় সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ রাজ্যবাসীকে ভোগ করতে দেওয়া হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন একদা মমতা ঘনিষ্ট এই নেতা। মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে বক্তব্য পেশের আগেই অবশ্য তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে চিঠি লিথে তাঁর দল ছাড়ার কারণ জানান শুভেন্দু অধিকারী। সেখানেই 'তৃণমূল পচে গিয়েছে' বলে দাবি করেন।
আরও পড়ুন- ‘তৃণমূল পচে গিয়েছে’, পত্রবোমা শুভেন্দুর
শুক্রবার গাড়ি করে সড়ক পথে বাড়ি থেকে মেদিনীপুরে শাহের সভাস্থলে পৌঁছান শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর হাতে পতাকা পদ্ম তুলে দেন অমিত শাহ। নতুন দলে যোগ দিয়েই শাহকে প্রশাংসায় ভরিয়ে দেন শুভেন্দু। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে 'বড় দাদা' বলে সম্বোধন করেন। জানান তাঁর সঙ্গে ২০১৪ সাল থেকে শাহের সম্পর্ক থাকলেও একবারও বিজেপিতে যোগ দানের প্রস্তাব দেননি। রাজনৈতিক সৌজন্যতার কথা তুলে ধরেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, 'কোভিডের সময় দলের পক্ষ থেকে কেউ তাঁর খোঁজ না নিলেও অমিত শাহ দু'বার আমাকের ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন।'
আরও পড়ুন- শুভেন্দুর হাত ধরে বিজেপিতে তৃণমূলের কোন কোন বিধায়ক? রইল তালিকা
আদি বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শুভেন্দুর আশ্বাস, 'মাত্তবরি করতে বিজেপিতে আসিনি। খবরদাড়িও করব না। যা পার্টি বলবে তাই করব। যদি পতাকা লাগাতে বলে তাহলে তাই করব।'
অর্থাই একদিকে প্রাক্তন দলের নেত্রী ও ভাইপোর বিরুদ্ধাচারণ, অন্যদিকে আদি বিজেপি কর্মীদের আশ্বস্ত করার মাধ্যমেই রাজনীতিতে নয়া ইনিংসের সূচনা করলেন শুভেন্দু অধিকারী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন