তৃণমূল বা অন্য দল থেকে বিজেপিতে আসা নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। অপরাধীদের দলে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও করছেন পুরনো বিজেপি কর্মীরা। দুর্গাপুরের মঞ্চে তাণ্ডবও চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ স্থানীয় দলীয় নেতৃত্ব। ক্ষমতায় আসার আগেই যেন গেরুয়া শিবির আদি ও নব্য বিজেপিতে বিভক্ত হতে চলেছে। এই সংক্রান্ত পোস্টার পড়েছে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায়। তৃণমূলের পর নয়া উপসর্গ পদ্ম শিবিরে।
দুর্গাপুর, গাইঘাটা, নারায়ণগড়, বেলদা সহ নানা জায়গায় বিজেপির একাংশ দলে নতুনদের যোগদান নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে। ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি দুর্গাপুরে যোগদানের সভায় অশান্তি বাধে কয়লা কারবারীদের দলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে। দলীয় কর্মীদের বক্তব্য, কয়লার বেআইনি কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে যোগদানকারী একাংশের বিরুদ্ধে। এমনকী দলবদলে অর্থের লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে। সেই নিয়েই বিজেপিতে নতুন অশান্তি। এদিকে কয়লার বেআইনি কারবারে অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সিবিআই। স্বভাবতই বিজেপির একাংশ নানা প্রশ্ন তুলেছেন।
এদিকে দুই মেদিনীপুরের নানা জায়গায় দাদার অনুগামীরা শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগের পর তাঁদের অফিসে গেরুয়া পতাকা তুলেছেন। অভিযোগ, এক্ষেত্রে কিছু জায়গায় তাঁদের হামলার শিকার হতে হয়েছে{ এমন ঘটনা রাজ্যের নানা জায়গায় ঘটে চলেছে। কলকাতা সহ রাজ্যের সর্বত্রই অন্য দল থেকে বিজেপিতে আসা পুরনোরা মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা অনেকেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলেই অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক দক্ষিণ কলকাতার এক বিজেপি নেতার অভিমত, যে তৃণমূলীরা বিজেপি থেকে আসছে তাঁরা অনেকেই বলছে আগেও আমাদের হাতে ক্ষমতা ছিল, বিজেপি এলেও আমরাই ক্ষমতায় থাকব। এসব মেনে নেওয়া যায় না। স্থানীয় স্তরে দলে এসে পদও জুটে গিয়েছে। অস্তিত্বের সংকটে ভুগছেন আদি বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় স্তরে সিপিএম তথা বামপন্থী থেকে স্রোতের মত তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। যোগ দিয়েছেন সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লা, ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা উদয়ন গুহর মতো একটু উঁচু দরের নেতারাও। তখনও তৃণমূলে প্রশ্ন উঠেছিল। আদি-নব্য তৃণমূলের মধ্যে গন্ডগোলও হয়েছে কিন্তু যাঁরা দলে এসেছিলেন তাঁরা তৃণমূলেই থেকে গিয়েছে। তবে আদি তৃণমূলের একটা বড় অংশ এখন রাজনীতির ওপর নজর রাখছে। তাঁরা প্রায় ঘরে বসে গিয়েছে। তৃণমূল নেত্রী একাধিকবার পুরনো-নতুন মিলমেশে কাজ করার কথা বলেছেন। কিন্তু তাতে কতটা কাজ হয়েছে তা ২০২১-এর নির্বাচনের ফল জানান দিয়ে দেবে। বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগেই দলে ঢোকার ঢল নেমেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, গোষ্ঠীকলহ সামলাতেই হিসশিম খেতে হবে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে।
শুধু স্থানীয় স্তরের নয় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ বিজেপিতে যোগ নিয়ে যে ধরনের অভিযোগ উঠছে তাতে চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন। অনেকে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ ব্যক্তও করেছেন। এই ধরনের প্রবণতা যে বাংলার রাজনীতিতে রয়েছে তা মেনে নিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "বাংলার রাজনীতিতে এমন প্রবণতা আছেই। নতুন কিছু নয়। আমরা সতর্ক হয়েই এগোব।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন