BJP: কলকাতা পুরভোটের ফল বেরোতেই ফের স্বমহিমায় তথাগত রায়। বিজেপির হতাশাজনক ফলের জন্য রাজ্য নেতৃত্বকেই বুধবার কাঠগড়ায় তোলেন এই রাজনীতিবিদ। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশকে পচে যাওয়া লম্পট-বিশ্বাসঘাতক কটাক্ষ করে তথাগত রায়ের ট্যুইট, ‘বিজেপির পুনরুত্থান সম্ভব ছিল। কিন্তু লম্পট এবং বিশ্বাসঘাতকরা দল পরিচালনা করছেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর ত্রুটি সংশোধন জরুরি ছিল। কিন্তু সেই ত্রুটি সংশোধনে জোর না দেওয়ায় দল পুর নির্বাচনে ফের মুখ থুবড়ে পড়েছে।‘
এখানেই শেষ নয় তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি বহুবার দলের নির্দিষ্ট জায়গায় রাজ্য সংগঠনের কোথায় গলদ জানিয়েছি। কিন্তু কোনওবার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।‘ যদিও দলের প্রবীণ নেতার ট্যুইট আক্রমণ প্রসঙ্গে মুখ খোলেনি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘একমাত্র তথাগত রায় বলতে পারবেন কেন এরকম লিখেছেন।‘
এদিন শুধু রাজ্য বিজেপি নয়, নাম না করে শাসক দল এবং মুখ্যমন্ত্রীকেও তোপ দাগেন তথাগত রায়। তিনি লেখেন, ‘হিন্দু বাঙালিরা নিজেদের সর্বনাশ এবং বিলুপ্তির পথে নিয়ে যাচ্ছে। অযোগ্যদের বাসস্থান হয়ে উঠছে পশ্চিমবঙ্গ। গত ৪৪ বছর ধরে আত্মবিনাশকারী শাসকেরা রাজ্যে শাসন করছে। সরকার পরিচালিত হচ্ছে একজন অযোগ্য ব্যক্তির দ্বারা। সরকারের নানা অংশে অযোগ্য ব্যক্তিরা বসে।‘
এদিকে, বিধানসভায় শোচনীয় পরাজয়। উপনির্বাচনেও ফলাফল হতাশজনক। এই প্রেক্ষাপটে রাজ্য বিজেপির সংগঠনে ব্যাপক রদবদলের দাবি উঠছিল দলের অন্দর থেকেই। শেষ পর্যন্ত কলকাতা পুরভোটে ভরাডুবির পর সংগঠনের শীর্ষ পদে ব্যাপক বদল করল বঙ্গ বিজেপি। বাদ পড়লেন ‘আদি’ বিজেপির শীর্ষ নেতারা। কমিটি গঠনে প্রাধান্য পেলেন অপেক্ষাকৃত তরুণ মুখরা।
বুধবার রাজ্য বিজেপির তরফে যে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে রয়েছেন ১১ জন সহ-সভাপতি। ৫ জন সাধারণ সম্পাদক। সম্পাদকের সংখ্যা ১২ জন। সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বাদ পড়েছেন দলের দীর্ঘ দিনের নেতা সায়ন্তন বসু। রাজ্য কমিটিতে বাতিলের তালিকায় প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরীও। সঞ্জয় সিংকে রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে সরালেও সহ-সভাপতি করা হয়েছে। তবে, সাধারণ সম্পাদক পদে আনা হয়েছে এতদিন দলের রাজ্য যুবমোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁকে। রয়েছেন রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। এই পদেই রয়েছেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, বিধায়ক দীপক বর্মন, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় (গত বিধানসভা নির্বাচনে সিউড়ি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন তিনি)।
সহ-সভাপতি করা হয়েছে যে ১১ জনকে তাঁরা হলেন, সাংসদ জগন্নাথ সরকার, অর্জুন সিং, খগেন মুর্মু, জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর। রয়েছেন সঞ্জয় সিং, শ্যামাপদ মণ্ডল, রথীন বসু, অনিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণ বৈদ্য, সমীর দাস ও মধুছন্দা কর। অপরদিকে, বিধানসভা ভোটে শোচনীয় হার। রাজ্যজুড়ে আসনের নিরিখে শূন্য বামেরা। একুশের বিধানসভার নিরিখে কলকাতায় একটি আসনেও এগিয়ে ছিল না বামেরা। কিন্তু, আট মাসের ব্যবধানে কলকাতায় লাল-বাহিনীর ভোট বাড়ল। কমল বিজেপি। আসনের নিরিখে বিজেপির থেকে পিছিয়ে থাকলেও শতাংশের বিচারে গেরুয়া শিবিরকে টেক্কা দিল লাল ঝান্ডাধারীরা। বিপুল ভোট বেড়েছে তৃণমূলের।
কলকাতা পুরনিগমের মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ১৪৪। এর মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ১৩৪টি আসন। যা গতবারের থেকে ২০টি বেশি। এবার শতাংশের বিচারে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৭২ শতাংশ। যা আট মাসের আগের বিধানসভা ভোটে কলকাতায় প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। ২০১৫ সালে কলকাতায় তৃণমূল পেয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট। দেড় বছর পর পুরভোটে যা ২২ শতাংশ বেড়েছে। যে ১০টি ওয়ার্ডে বিরোধিরা জিতেছে, তার সবকটাতেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শাসক দলের প্রার্থীরা।
এদিকে ভোট কমল বিজেপির। ২০১৫ সলের ভোটে বিজেপি পেয়েছিল ৭টি আসন। পরে দুই বিজেপি কাউন্সিলর তৃণমূলবে যোগ দেন। ফলে আসন সংখ্যা ছিল ৫টি। এবার সেই সংখ্যা আরও কমে হল ৩। প্রাপ্ত ভোট প্রায় প্রায় ৯ শতাংশ। একুশের বিধানসভার নিরিখে কলকাতায় বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল প্রায় ২৯ শতংশ। যা এবার প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন