তাপস দাশ | অরুণিমা কর্মকার
রাজকুমার রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু ও তা নিয়ে শিক্ষকদের বিক্ষোভ রায়গঞ্জের রাস্তা ছাড়িয়ে কলকাতাতেও এসে পড়ল। পঞ্চায়েত ভোটের ডিউটি সেরে কেন আত্মহত্যা করলেন একজন প্রিসাইডিং অফিসার, সে নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর এবার শিক্ষকদের স্পষ্ট বক্তব্য, নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা ছাড়া এরপর তাঁরা আর ভোটকর্মী হিসেবে কাজ করবেন না।
সোমবার শিক্ষকদের একটি অংশের তরফ থেকে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের অন্যতম দাবি, রাজকুমার রায়ের মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত, এবং ক্ষতিপূরণ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুল শিক্ষক সংযুক্তা পুরকায়েত প্রশ্ন তুলেছেন, "২০ লক্ষ টাকা বিমার কথা বলার পর, ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের কথা কেন বলা হচ্ছে? রাজকুমার রায়ের বুথের আর এক ভোটকর্মী ও শিক্ষককে গ্রেফতার করার কথাও আমরা শুনেছি। শিক্ষকদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে, কেন তাঁদের কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আমরা তার জবাব চাই।"
teachers protest rally in kolkata pic.twitter.com/6Qt4wLxoYg
— IE Bangla (@ieBangla) May 28, 2018
রায়গঞ্জ থেকেই মিছিলে যোগ দিতে এসেছিলেন কৃষ্ণেন্দু রায়চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন ১৬ মে থেকেই শিক্ষক ও সাধারণ মানুষদের ক্ষোভে উত্তাল হয়েছে রায়গঞ্জ। "বিক্ষোভ চলাকালীনই প্রশাসনের এক আধিকারিক এসে জানান, রেলের রিপোর্ট এসেছে, এটা আত্মহত্যার ঘটনা। এরপরেই ক্ষোভ চরমে ওঠে। শিক্ষকরা এরপরেই জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন, যা প্রায় ছ'ঘণ্টা ধরে চলেছিল। রাত ৯টা পর্যন্ত অবরোধ চলার পর জেলাশাসকের দফতর থেকে জানানো হয় বিষয়টির সিআইডি তদন্ত হবে।"
আরও পড়ুন, পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরব মমতা
শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী, তাঁদের ভোটগণনার তালিকা থেকে নামও কেটে দেওয়া হয়। অভিযোগ, এরপর বেশ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মহকুমা শাসক নিগ্রহ এবং কয়েকজনের বিরুদ্ধে জাতীয় সড়ক অবরোধের মামলা করা হয়। বেশ কয়েকদিন ধরে হাজতবাসের পর সোমবারই জামিন পান তিনজন। তাঁদের হয়ে রায়গঞ্জ আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বিকাশবাবুর আশা, আগামিকাল, মঙ্গলবার, জাতীয় সড়ক অবরোধের ঘটনায় ধৃত ব্যক্তিও জামিন পেয়ে যাবেন।
এদিন নির্বাচন কমিশনের কাছেও ডেপুটেশন দিতে যান শিক্ষক প্রতিনিধিরা। যথাযথ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি না পেলে তাঁরা আর ভোটের কাজ করবেন না বলে জানিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষকদের এই অংশ।
এদিনের মিছিলের আহ্বায়করা বারবার স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন, তাঁরা কোনও দলীয় রাজনীতির পক্ষে নন। শিক্ষক পরিচয়টুকুই তাঁদের কাছে মুখ্য। তবে মিছিলের অনেকেই রায়গঞ্জে তাঁদের ঠিক কতজন সহকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন, সে নিয়ে সঠিকভাবে বলতে পারেননি। আইনি জটিলতা, স্থানগত দূরত্ব এবং প্রশাসনের মুখে কুলুপ আঁটা, সব মিলিয়ে বেশ কিছু ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ৭০ জন শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ নিয়েও প্রচার চলছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। এ ব্যাপারেও অন্ধকারেই রয়েছেন শিক্ষকরা।