মুর্শিদাবাদ থেকে আল-কায়দা সন্দেহভাজন ৬ জনকে এনআইএ গ্রেফতার করার পর বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ করছে, তৃণমূল রাজনীতির স্বার্থে সন্ত্রাসবাদীদের আঁতুরঘর বানিয়ে ফেলেছে বাংলাকে। তৃণমূল কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশের উদাহরণ তুলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে খাগড়াগড়ের বিষ্ফোরণের পর মুর্শিদাবাদের এই ঘটনা ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বড় ইস্যু হতে চলেছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুর্শিদাবাদের এই গ্রেফতারের ঘটনায় বিজেপির হাতে টাটকা ইস্যু হাতে চলে এল। বিজেপি অভিযোগ করছে রাজ্য সরকারের পরোক্ষ মদতে উৎসাহ পাচ্ছে মুসলিম সন্ত্রাসীরা। শনিবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "বাংলায় আইন-শৃঙ্খলা নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত অভিযোগ করেছিলেন পশ্চিম বাংলায় ট্রেনিং নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। রাজ্যের নানা জেলায় বিষ্ফোরণ হচ্ছে, দাঙ্গা হচ্ছে। এসবের পিছনেও জঙ্গিরা রয়েছে। আমরা বারুদের স্তুপের ওপর বসে আছি।" তাঁর অভিযোগ, "২০২১ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সারা বাংলায় ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী ও মাওবাদীদের মদত দেওয়া হচ্ছে।"
বাংলায় সন্ত্রাসবাদীদের কার্যকলাপ ক্রমশ বাড়ছে তা নিয়ে বিজেপি প্রচার আরও জোরদার করবে গেরুয়া শিবিরের এদিনের আক্রমণের ঝাঁঝে তার ইঙ্গিত মিলেছে। বিজেপির রাজ্য সহসভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাটাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের হাব বানিয়ে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী তলায় তলায় ষড়যন্ত্র করে পশ্চিম বাংলাদেশ বানানো প্রচেষ্টা করছেন।"
"বেআইনি বোমা তৈরির কারখানা হয়ে উঠেছে রাজ্য।" এদিন গ্রেফতারের পর বলেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরও। শনিবার একদিকে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব অন্যদিকে রাজ্যপাল মিলে সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়েছে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "যখন ৮ জন পুলিশ কর্মী গুলি খেয়ে মারা যায় তখন সেই রাজ্যটা সন্ত্রাসের আঁতুরঘর হয় না। সেই অপরাধীকে ধরে আনতে গিয়ে এনকাউন্টার করে মেরে ফেলা হল। সেটা কী টেররিস্ট স্টেট নয়? কোনটা টেররিষ্ট স্টেট। তাহলে যোগী আদিত্যনাথের আগে পদত্যাগ করতে হবে।" রাজ্যপালের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ফিরহাদ। তাঁর প্রশ্ন, দিলীপ ঘোষ বা অমিত শাহর ভাষায় কথা বলে সাংবিধানিক প্রধান থাকা উচিত কী? তিনি বলেন, "অমিত শাহ চাকরি খেয়ে নেবেন তাই এমন কথা বলছেন।"
বর্ধমানে খাগড়গড় বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৪-এর ২ অক্টোবর। ৬ বছরের মাথায় ফের বড় ধরনের অভিযানে ধরা পড়ল আল-কায়দা সন্দেহভাজন। রাজনীতির কারিবারিদের মতে, স্বভাবতই বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সুযোগকে হাতছাড়া করবে না পদ্মশিবির। তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারের অস্ত্র পেয়ে গিয়েছে পদ্মশিবির। সেই অস্ত্রে এদিন শান দিলেন দলীয় নেতৃত্ব। অভিজ্ঞমহল মনে করছে, ফের সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে সুর চড়াবে বিজেপি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন