Advertisment

কোকোমি, মণিপুরের হিংসায় কেন এই সংগঠনের নাম বারবার সামনে আসছে?

মূলত ২০১৯ সালে ইন্দো-নাগা শান্তি আলোচনার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই কুকু-জোমিদের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে মেইতেইদের 'উদ্বেগ' ফুটে উঠেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Manipur Conflict

বুধবার ২০২৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলার ফুগাকচাও ইখাইতে বিক্ষোভ চলাকালীন কয়েকশো বিক্ষোভকারী। (পিটিআই ছবি)

মণিপুর অখণ্ডতা সমন্বয়কারী কমিটি (কোকোমি), বর্তমান সংঘর্ষ চলাকালীন মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালাচ্ছে। গত তিন মাস ধরেই তাদের এই চেষ্টা অব্যাহত। ভারত-নাগা শান্তি আলোচনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চার বছর আগে কোকোমি তৈরি হয়েছিল। কারণ, মেইতেইদের আশঙ্কা ছিল, কেন্দ্র-নাগা শান্তিচুক্তি মণিপুর রাজ্যের অখণ্ডতা বিঘ্নিত করবে। মণিপুর, ২০১৯ সালের অক্টোবর এবং নভেম্বর পর্যন্ত বড় বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে। মণিপুরবাসীর প্রত্যাশা যে কেন্দ্রীয় সরকার এবং নাগা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আলোচনা থেকে একটি চূড়ান্ত চুক্তি হবে। এই আলোচনা, ২০১৯ সালে শেষ হয়েছিল। প্রতিবাদে গঠিত হয়েছিল কোকোমি। যা, মেইতেইদের পাঁচটি প্রধান সুশীল সমাজ সংগঠনের সমষ্টি।

Advertisment

কেন্দ্র নাগা শান্তিচুক্তি যাতে মণিপুরের ভূখণ্ডকে প্রভাবিত না-করে, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত কোকোমি আসলে, 'মণিপুরের অখণ্ডতা'র জন্য গঠিত একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট। নাগারা মণিপুরের তিনটি প্রধান জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে একটি। বাকিরা হল মেইতেই এবং কুকি-জোমি। যাঁরা মণিপুর রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। মণিপুর, অসম, অরুণাচল প্রদেশ এবং মায়ানমারের নাগা-অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে নাগাল্যান্ডের সঙ্গে মিলিয়ে এক নাগা, 'মাতৃভূমি' তৈরির দাবি, মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। কারণ, মেইতেই সম্প্রদায়ের আশঙ্কা ছিল যে নাগাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের চূড়ান্ত চুক্তি মণিপুরের অখণ্ডতাকে নষ্ট করবে।

শান্তিচুক্তির বিরুদ্ধে সেই আন্দোলনে, কোকোমি একটি ধারাবাহিক প্রতিবাদ শুরু করেছিল এবং দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে দেখা করেছিলেন কোকোমির প্রতিনিধিরা। তাঁরা কেন্দ্রের কাছে চূড়ান্ত আশ্বাস চেয়েছিলেন যে, নাগাদের জন্য বন্দোবস্ত 'মণিপুরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং প্রশাসনিক গঠনকে একদমই প্রভাবিত করবে না।'

যাইহোক, কোকোমি শীঘ্রই ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিলের সঙ্গে একই দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। তা হল- মণিপুরে নাগাদের শীর্ষ সংস্থা সেরাজ্যে একটি এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন) বাস্তবায়নের দাবিতে ও ক্রমাগত অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। কোকোমিও তাতে গলা মেলায়। দু'পক্ষেরই অভিযোগ, প্রতিবেশী মায়ানমার থেকে মণিপুরের কুকি-অধ্যুষিত জেলাগুলোয় অবৈধ অভিবাসীরা প্রবেশ করছে। মেইতেই এবং নাগা গোষ্ঠীর চাপের মুখে, ২০২২ সালে মণিপুর বিধানসভা সেরাজ্যে একটি জনসংখ্যা কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং একটি এনআরসি বাস্তবায়নের জন্য দুটি প্রস্তাব পাস করে।

আরও পড়ুন- ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর পথে দ্রুত এগোচ্ছে মোদী সরকার, চলতি মাসেই কমিটির প্রথম বৈঠ

বর্তমানে মণিপুরে হিংসার উত্তাপের মধ্যেও কোকোমির সেই দাবি অব্যাহত। কুকি-জোমি গোষ্ঠীর দিকে ইঙ্গিত করতে মেইতেইদের অভিযোগ, অবৈধ অভিবাসন মণিপুরের রাজনৈতিক ও সামাজিক অশান্তির মূল কারণ। মে মাসে শুরু হওয়া মণিপুর হিংসার বর্তমান পর্বের প্রাথমিক দিনগুলোয়, কোকোমি দলকে উপত্যকাজুড়ে ত্রাণসামগ্রী বহনকারী শিবিরগুলোয় সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে। সেই সব শিবিরগুলোয়, যেগুলো কুকি-অধ্যুষিত এলাকায় বাস্তুচ্যুত হওয়া বা অন্যত্র চলে যাওয়া মেইতেইদের আশ্রয় দিয়েছে।

Violence Nagaland Manipur
Advertisment