২২ শে জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা। তার আগেই রামমন্দির ইস্যুতে বিজেপিকে নিশানা করেছে বিরোধী শিবির। তবে রামলালার রাজ্যভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণ নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে একটি ফাটল ধরেছে। বিজেপির কাছে ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে রামমন্দির উদ্বোধনের মাধ্যমে বিজেপি যে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চলেছে সে সম্পর্কে সচেতন বিরোধী শিবির। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রামমন্দির উদ্বোধনে কংগ্রেসের অংশগ্রহণ নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে।
রাম মন্দির ইস্যুটি ইন্ডিয়া জোটেও বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। যদিও সিপিআই(এম) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে তারা রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবে নে। ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলায় বিজেপি এবং আরএসএসের সমালোচনা করার সময়, তৃণমূল কংগ্রেস ইঙ্গিত দিয়েছে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রামমন্দির উদ্বোধনে আমন্ত্রণ এড়িয়ে চলবেন। অখিলেশ যাদবের স্ত্রী সমাজবাদী পার্টির সাংসদ ডিম্পল যাদব বলেছেন, আমন্ত্রণ পেলে তিনি উপস্থিত থাকবেন।
বুধবার, এনসিপি সভাপতি শারদ পাওয়ার বলেছেন যে রাম মন্দিরের উদ্বোধনে তাকে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও, রামমন্দির নির্মাণে দল খুশি। রাম মন্দির নির্মাণের জন্য অনেকেই অবদান রেখেছেন"। বিজেপি সম্পর্কে, পাওয়ার বলেন, নির্বাচনের আগে রামমন্দির ইস্যুকে বিজেপি রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে কিনা তা নিয়ে তিনি রীতিমত সন্দিহান।মন্দির ট্রাস্ট কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপারসন সনিয়া গান্ধী এবং লোকসভায় দলের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন কিনা জানতে চাইলে অধীর চৌধুরী দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন যে দল সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সঙ্গে তিনি নিজে স্বীকার করেছেন যে তাকে "আনুষ্ঠানিকভাবে, সমস্ত সৌজন্যের সঙ্গে" আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তিনি যোগ করেছেন যে বিজেপি এবং আরএসএস "ধর্মের পাশাপাশি রামমন্দির ইস্যুতে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে পূর্ণ করতে চাইছে … এটা খুব স্পষ্ট"।
খোলাখুলিভাবে ইভেন্টে অংশ নেওয়ার পক্ষে যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র নেতা দিগ্বিজয় সিং। তিনি বলেছেন, মন্দির ট্রাস্ট কোন দলের অধীনে নয়। লোকসভা সাংসদ শশী থারুরের অবস্থান স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, “ব্যক্তিগতভাবে, আমি বিশ্বাস করি ধর্মীয় বিশ্বাস একটি ব্যক্তিগত বিষয় এবং এটিকে কোন ভাবেই রাজনৈতিকভাবে দেখা উচিত নয়, বা রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করা উচিত নয়। আমি আশা করি আমন্ত্রিতদের প্রত্যেককে যাওয়া বা না যাওয়াকে ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। যদি আমন্ত্রণ পেয়েও দলের প্রতিনিধিরা রাম মন্দিরে না যান তাহলে বিজেপি বিরোধীদের 'হিন্দু-বিরোধী' তকমা দেবে। থারুর যোগ করেছেন "হিন্দু হিসাবে নিজের কথা বলতে, আমি মন্দিরকে রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চ হিসাবে দেখি না। আমি রাম মন্দির পরিদর্শন করতে চাই, তবে উদ্বোধনের মতো বড় রাজনৈতিক আসরে নয় এবং নির্বাচনের আগেও নয়, যাতে আমার যাওয়ার মধ্যে কোনও ধরণের রাজনীতির ছোঁয়া না পড়ে।”
অন্য একজন সিনিয়ার নেতা উল্লেখ করেছেন কংগ্রেসের তরফে অনুষ্ঠান বয়কট নির্বাচনের আগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর সঙ্গে কথা বলার সময় ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেসের সভাপতি স্যাম পিত্রোদা বলেন, ভারতে ধর্মকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যেখানে এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয়। এটাকে জাতীয় ইস্যু করা উচিত নয়। তিনি বলেন, "২০২৪ সালের নির্বাচন ভারতের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি যে ভারতের জনগণ ২৪ সালের নির্বাচন ভারতের ভবিষ্যতের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে ভাববে"।
এবিষয়ে একজন কংগ্রেস নেতা বলেছেন: “কংগ্রেস এখনও রামমন্দির ইস্যুতে তার চূড়ান্ত অবস্থান নেয়নি এবং পিত্রোদার মতো নেতারা আগে থেকেই চূড়ান্ত বিবৃতি দিচ্ছেন। গত নির্বাচনে এগুলোই আমাদের ক্ষতি করেছে।”