অরাজনৈতিক সভায় চেনা মেজাজে শুভেন্দু অধিকারী। ঝাঁঝালো বক্তব্য। নাম না করেই বিঁধলেন তৃণমূলকে। 'বহিরাগত' থেকে 'দলতন্ত্র' ইস্যুতে তোপ দাগলেন। জানিয়ে দিলেন বাংলায় গণতন্ত্র ফেরানোই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। আবারও বললেন নন্দীগ্রাম অন্দোলন কোনও দলের নয়, মানুষের আন্দোলন ছিল। বাধা সত্ত্বেও তাঁকে রোখা যাবে না বলে এ দিন ফের দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।
হলদিয়ায় স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তের ১২১তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে এ দিন যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানেই তিনি বলেন, 'ভাল কাজের জন্য লড়ব, বেকারদের কর্মসংস্থান-কৃষকের অধিকারের কথা বলব, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই আমাদের একমাত্র পথ ও মত। পশ্চিমবঙ্গে এটাই ফেরাতে হবে। কেন বাই দ্য পার্টি অফ দ্য পার্টি এখানে থাকবে?।'
ভোট যত এগোচ্ছে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন একের পর এক তৃণমূল বিধায়ক, পুর চেয়ারম্যানরা। দলে গণতন্ত্র নেই বলেই সরব জোড়া-ফুলের 'বিদ্রোহী'রা। বিরোধী বিজেপি বা বাম-কংগ্রেসের সুরে সুর মিলিয়েই তৃণমূলেরই অনেকেই 'দলতন্ত্রে'র বিরুদ্ধে সোচ্চার। এদিন 'দলতন্ত্র' ইস্যুতেই মুখ খুললেন তৃণমূলের দোর্দদণ্ডপ্রতাপ নেতা শুভেন্দু। 'পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র ফেরাতে হবে' মন্তব্য করে নাম না করেই কটাক্ষ করলেন তৃণমূল জমানার।
গত কয়েক মাস ধরেই তৃণমূল ও শুভেন্দু অধিকারীর সম্পর্কে দূরত্ব বেড়েছে। একাধিক অরাজনৈতিক সভাতেই নাম না করে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শাসক দলের নন্দীগ্রামের বিধায়ক। 'দাদা'র অনুগামী' ব্যানারে পড়েছে পোস্টার-ফেস্টুন। ফলে দূরত্ব আরও চওড়া হয়েছে। তার মাঝেই ফিরহাদ হাকিম থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় নাম করেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁকে ব্যক্তি আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে। পরে মন্ত্রিত্ব ছাড়েন শুভেন্দু। জল্পনা তৈরি হয় তাঁর তৃণমূল ছাড়ার বিষয়ে।
তাঁকে উদ্দেশ্য করে তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যক্তি আক্রমণের এদিন জবাব দেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, 'অনেকেই অনেক বড় কথা বলেছেন। আমি ব্যক্তি আক্রমণের রাজনীতি করি না। তবে, জনগণ যখন চট ঘেরা জায়গায় গিয়ে আঙুল টিপবেন থকন অনেকের অবস্থাই অনিল বসু, লক্ষ্ণণ শেঠ, বিনয় কোঙারদের মত হবে।'
জোড়া-ফুল নেতৃত্বের দাবি নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সাফল্য তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই। এদিন আবারও সেই দাবি নস্যাৎ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, 'নন্দীগ্রাম আন্দোলন কোন দল বা ব্যক্তির নয়। ওটা মানুষের আন্দোলন ছিল। মানুষই জয়ী হয়েছে।'
বিজেপির লক্ষ্য বাংলা। ২১-এর ভোটে জিততে ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবিরেরে বিভিন্ন প্রদেসের নেতারা এ রাজ্যে আনাগোনা শুরু করেছেন। যাঁদের 'বহিরাগত' বলে সোচ্চার তৃণমূল। এই প্রেক্ষিতে এ দিন শুভেন্দু অধিকারী ইঙ্গিতপূর্ণভাবেই বলেন, 'স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্ত নেহেরুকে বহিরাগত বলে ভাবতেন না। মনে রাখতে হবে আমরা প্রথমে ভারতীয়, পরে বাঙালি।'
দলেরই একাংশের মদতে তাঁর কাজে বাধা সৃষ্টি করে হয়েছে বলে অভিযোগ শুভেন্দুর। এ দিন শাসক দলের একাংশকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, 'আমাকে কেউ ভাল কাজের জন্য রুখতে পারবে না। অনেকেই বলেছিল পদ দেখিয়ে সভায় লোক আনা হচ্ছে। আমি কোনও পদের লোভ করি না। কিন্তু ২৭ নভেম্বর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরও আমার সভায় লোক আসছে। এদের তৃণমূল-সিপিএম, বিজেপি বা কংগ্রেস আনেনি। এইসব মানুষদের সঙ্গে আমার আত্মার যোগ রয়েছে। আত্মিক সম্পর্ক। এত সহজে একে ছিন্ন করা যাবে না।'
নাম না করেই ফের অরাজনৈতিক সভা থেকে তৃণমূলকে দূষলেন শুভেন্দু অধিকারী। অস্বস্তি কাঁটা আরও তীক্ষ্ণ হল জোড়া-ফুল শিবিরের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন