Advertisment

Exclusive: বিজেপি প্রার্থীর বাড়িতে নেই শৌচালয়, ঘরেই থাকছে গরু-ছাগল

চন্দনাই বাঁকুড়ার শালতোরার বিজেপি প্রার্থী। চন্দনা বাউড়ির পারিবারিক 'ব্যাকগ্রাউন্ড'ই এখন এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির 'ইউএসপি'।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

এক্সপ্রেস ফোটো- পার্থ পাল

ঘরে ছাগল, ঘরের বারান্দায় গরু। চল্লিশ বছর আগে তৈরি টালির চালা এতটাই নেমে এসেছে যে ঘরে ঢুকতে গেলে মাথা নামাতেই হবে। ট্যাঁরা-ব্যাকা ঢালাইয়ের পাটা দিয়ে তৈরি চৌকি। বাড়িতে শৌচালয়ও নেই। ১৩ বছর আগে পাশের বড়জোড়া বিধানসভার বিহারজুরিয়া থেকে কেলিয়া গ্রামের এই ঘরেই বধূ হয়ে এসেছিলেন চন্দনা। স্বামীর সঙ্গে যোগারের কাজও করেছেন চন্দনা বাউড়ি। এই চন্দনাই বাঁকুড়ার শালতোরার বিজেপি প্রার্থী। চন্দনা বাউড়ির পারিবারিক 'ব্যাকগ্রাউন্ড'ই এখন এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির 'ইউএসপি'।

Advertisment

সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ গঙ্গাজলঘাঁটির কেলিয়া গ্রামে পৌঁছাতেই দেখা গেল প্রচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বছর তিরিশের চন্দনা। বিজেপি কর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন তাঁর টালির বাড়ির সামনে। ছোট ছেলে স্বপ্নদীপকে আলতো আদর, শ্বশুড়-শাশুড়িকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিয়ে চন্দনা বেরিয়ে পড়লেন প্রচারে ঝড় তুলতে। সঙ্গী হলেন স্বামী ও দলের কর্মীরা। বাড়িতে দাদু-ঠাকুমার কাছে রেখে গেলেন তিন ছেলে-মেয়েকে।

publive-image
চন্দনা বাউরি। এক্সপ্রেস ফোটো- পার্থ পাল

একসময় ফরোয়ার্ড ব্লক করতেন শ্রাবণ। বিজেপিতে তিনি যোগ দিয়েছেন বছর দশেক আগে। চন্দনা গঙ্গাজলঘাঁটি উত্তর মন্ডলের মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তারপর ওই মন্ডলের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক থাকার পর জেলা বিজেপির সম্পাদক হয়েছেন। এমন পরিবার থেকে বিজেপি আপনাকে প্রার্থী করেছে। কী বলবেন? "সাধারণ ঘরের মেয়েকে প্রার্থী করেছে দল। স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি এত নীচুতলা থেকে ওপরে ওঠানো হবে। কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বকে ধন্যবাদ।"

publive-image

এক মুঠ মুড়ি খেয়েই প্রচারে বেরিয়ে পড়লেন শালতোরার বিজেপি প্রার্থী। কেন বিজেপিতে এসেছেন? চন্দনা বলেন, "এই পার্টিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়। মহিলাদের জন্য অনেক কিছু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি করেছেন। মোদীজি দেশের উন্নয়ন করছেন। ওনার হাত শক্ত করার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেছি। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।" তিনি বলেন, "রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কোনও কাজ করছে না। দুর্নীতি, মেয়েদের সম্মান নেই, মহিলা সুরক্ষা দিতে পারছে না। সব জায়গায় কাটমানি। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দিদির ভাইরা কাটমানি খেয়েছেন।"

publive-image
প্রচারে চন্দনা। এক্সপ্রেস ফোটো- পার্থ পাল

চন্দনার বড় মেয়ে বছর এগারোর বর্ণা বাউড়ি রাজামেলিয়া হাইস্কুলে পঞ্চমশ্রেণিতে পড়ছে। ছোট মেয়ে শ্রেয়া বাউড়ি কেলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। কিন্তু সন্তানদের জন্য সময় দিতে পারেন না চন্দনা। সেকথা নিজেই স্বীকার করেছেন। বিজেপির এই প্রার্থী পড়াশুনা করেছেন দ্বাদশশ্রেণি পর্যন্ত। চন্দনা বলেন, "পড়াশুনায় আমার খুব বাধা। মাধ্যমিক দিয়েছি ২০০৮-এ। পরীক্ষার দুদিন আগে বাবা মারা যায়। বিয়ের পর স্বামী স্কুলে ভর্তি করেছিল। একাদশশ্রেণিতে পড়ার সময় স্বামী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময় অন্তসত্বা ছিলাম। রাজনীতিতে থাকায় বাড়িতে একেবারে সময় দিতে পারি না।"

চন্দনার শ্বশুর বাড়িতে কোনটা থাকার ঘর, কোনটা বসার ঘর তা বোঝার উপায় নেই। ঘর-বারান্দায় থাকে ছাগল-গরু। রয়েছে তিনটে ছাগল, তিনটে গরু। মোদীজির স্বপ্নের স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প থাকা সত্বেও বিজেপি প্রার্থীর বাড়িতে শৌচালয় পর্যন্ত নেই। তবে সম্প্রতি সরকারি আবাস যোজনার অর্থে বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। ঘরে কোনও খাট নেই। পাকাবাড়ি ঢালাইয়ের ভড়ার পাটাতন দিয়ে তৈরি চৌকি। তা নাহলে মাটির মেঝেতে শোয়ার ব্যবস্থা। ভোটে প্রার্থী হওয়ার পর ভিড় বেড়েছে বাড়িতে। তাঁদের বসার জন্য চারটে প্লাস্টিকের চেয়ার কেনা হয়েছে।

publive-image
এক্সপ্রেস ফোটো- পার্থ পাল

শ্রাবণ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। প্রয়োজনে স্বামীর কাজেও হাত লাগান চন্দনা। গ্রামে বাড়ি তৈরির কাজ হলে কড়াইতে করে সিমেন্ট-বালি মশলার যোগার দেন চন্দনা। এমন প্রায় দশটি বাড়ি তৈরির কাজে সাহায্য করেছেন তিনি। শ্রাবণের কথায়, "আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। আমার দল রয়েছে। একটা সময় ফরোয়ার্ড ব্লক করতাম। আমার তপসিলি সংশাপত্র ছিল না। সেই সুযোগে দলের একজন পঞ্চায়েতে প্রার্থী হন। জয় পেয়েই তৃণমূলে যোগ দেন। আমি তখন বিজেপিতে যোগ দিই।"

চন্দনা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিন ছেলে-মেয়ের যাবতীয় দায়িত্ব সামলান শাশুড়ি কল্যানী বাউড়ি, শ্বশুর সুনীল বাউড়ি। প্রার্থী হওয়ার আগে থেকেই দলের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরে থাকতে হয় ঘরের বধূকে। ছেলে-মেয়েকে সময় দিতে পারেন না চন্দনা। তাতেও কোনও আক্ষেপ নেই শ্বশুর-শাশুড়ির। জঙ্গলে শাল পাতা কুড়ানো আর হরতকি বিক্রি-বাট্টা করেই সংসার হাল ধরে রেখেছিলেন সুনীলবাবু। বউমা প্রার্থী হওয়ায় বেজায় খুশি এই দম্পতি। তাঁদের আশা, সমাজের সার্বিক উন্নয়ন করবেন তাঁদের পুত্রবধূ।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

west bengal politics West Bengal Assembly Election 2021 BJP Leader bjp
Advertisment