Advertisment

আজ নয়া দল ঘোষণা 'ভাইজানের', সামনে থেকে নেতৃত্বে নৌশাদ

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে এই ফ্রণ্ট ৬০ থেকে ৮০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়ে দিলেন আব্বাস সিদ্দিকি। ইতিমধ্যে নতুন দল নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ছবি- জয়প্রকাশ দাস

রাজনৈতিক কথাবার্তা বলার প্রথম দিকে একটা উগ্রতা ছিল। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতেন। কয়েক মাসেই যেন আমূল পরিবর্তন। ধীর, স্থির, ভেবেচিন্তে ঠান্ডা মাথায় কথা বলা রপ্ত করে ফেলেছেন। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমাতেও বদল ঘটেছে। পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি তথা ভাইজান আজ, বৃহস্পতিবার নতুন দল ঘোষণা করবেন৷ দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘুদের নিয়েই গঠন করা হচ্ছে ১০ দলের ফ্রন্ট। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে এই ফ্রণ্ট ৬০ থেকে ৮০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়ে দিলেন আব্বাস সিদ্দিকি। ইতিমধ্যে নতুন দল নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে বলে জানান সিদ্দিকি। এদিন শুধু প্রকাশ্যে নাম ঘোষণার পালা।

Advertisment

গত কয়েক মাস ধরেই প্রস্তুতি চলেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় সংগঠন মজবুত করতে বৈঠক, আলোচনা হয়েছে। ফুরফুরা শরিফে তালতলায় সাতসকালে গিয়ে দেখা গেল ভাইজানের বাড়িতে বহু মানুষের ভিড়। উদ্দেশ্য ভাইজানের সঙ্গে সাক্ষাৎ। আশপাশের জেলা শুধু নয়, মালদা, মুর্শিদাবাদ থেকেও শীতের সকালে হাজির অনুগামীরা। এলাকায় কীভাবে কাজ করবেন সেই নির্দেশ জানতে এসেছেন কেউ কেউ। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা সেরে নিচ্ছেন তিনি। নির্বাচনে অল আউট লড়াই করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন পীরজাদা।

আরও পড়ুন, বেসুরো' রাজীব-প্রবীরকে বিশেষ বার্তা শুভেন্দুর

৩৪ বছরের যুবক আব্বাস সিদ্দিকি স্থানীয় কলেজে স্নাতক স্তরে দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। তবে হাদিসে স্নাতকোত্তর আব্বাস। রাজ্যের নানা জায়গায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানাতে হয় ২ বছর আগে থেকে। তা না হলে তাঁর সময় পাওয়া যায় না। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে ফুরফুরা শরিফে নিজের দফতরে বসে কথাগুলো বলছিলেন আব্বাস।

publive-image ছবি- জয়প্রকাশ দাস

মুসলমানদের রাজনীতিতে বিশেষ ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কী বলবেন? এই বক্তব্যে সম্পূর্ণ সহমত নয় পীরজাদা। তাঁর বক্তব্য, "ভোট ব্যাঙ্ক শুধু মুসলমান নয়, গরীবদের মূলত ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু মুসলমান গরীব বেশি তাই তাঁদের চোখে পড়ে বেশি। মুসলমানদের মধ্যে যাঁরা ধনী ছিল তাঁরা আরও মোটাসোটা হয়ে গিয়েছে। তাই মুসলমানরা ভোট ব্যাঙ্ক বলাটা ঠিক নয়। মুসলমানদের সংখ্যাটা বেশি তাই নজর বেশি পড়়ছে।"

রাজনীতিতে আব্বাস এখন অনেকটাই পরিণত। তাঁর কথায়, "দায়িত্ব বেড়েছে তাই ভেবে-চিন্তে চলতেই হবে। এখন তো আর উল্টোপাল্টা ব্যাট চালানো যাবে না।" আব্বাস সিদ্দিকির রাজনীতিতে আসার মূল উদ্দেশ্য আইনসভায লোক পাঠানো। সিএএ বিল পাসের সময় লোকসভায় তৃণমূলের ৮ জন সাংসদ গড়হাজির ছিলেন। তখন এটা মাথায় আসে। কেন এ রাজ্য কংগ্রেস, বামফ্রন্ট ও তৃণমূল কংগ্রেসের দীর্ঘ শাসনের পরও পিছিয়ে আছে? প্রশ্ন তুলেছেন আব্বাস। তাই এখন বিধানসভায় প্রতিনিধি পাঠানোই তাঁর মূল লক্ষ্য। মানুষকে সংবিধানের অধিকার দেওয়ার দাবি তুলছেন তিনি। আইনসভায় সাধারণ মানুষের জন্য গলা ফাটাবেন তাঁর দলের প্রতিনিধিরা। অন্যায় হলে প্রতিবাদ করবেন। তিনি জানান, ২১ জানুযারি ২০২১ নতুন দল ঘোষণা করা হবে।

আরও পড়ুন, নন্দীগ্রামে মেরুকরণের পথে হাঁটলেন শুভেন্দু

ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে নাম নথিভুক্তকরণ হয়ে গিয়েছে। "সংসদীয় রাজনীতিতে কিছু মানুষ আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা নিয়ে প্রশাসনের একাংশকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস করছে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। এসব কিছু রক্ষা করতেই আমার রাজনীতিতে আসা।" বলেন তিনি। আব্বাস জানিয়ে দেন, বর্তমান পরিস্থিতে ৬০-৮০টা আসনে প্রার্থী দেব। ১০ দলের ফ্রন্ট থেকেই বলছি। এই সব আসনের ৯৯শতাংশতেই জিতবই। ত্রিশুঙ্কু হলে তো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন তাঁরা, এই আশায় রয়েছেন তিনি।

ইসলামে রাজনীতি নিয়ে কী বলছে? অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। আব্বাস বলেন, "যে যে দিক থেকে দেখেছে। ইসলাম কখনও বাধা দেয়নি। দেশের সংবিধান কখনও বলেনি পীরজাদা রাজনীতি করতে পারবে না। এই প্রশ্ন উঠছে কেন? দেশ যখন স্বাধীনতা দিয়েছে, তাহলে কেন আমার কন্ঠ রোধ করতে চাইছে? এটাই আপশোস, এটাই দুঃখের। কেউ যদি মনে করে একা পরিচিত হয়ে থাকব, তার কোনও ওষুধ আমার কাছে নেই। উনি আসাতে তৃণমূল হেরে যাবে। হারার যদি এত ভয় হয় তাহলে তাঁরা আসছে না কেন? একসঙ্গে মিশে গেলেই তো হয়। সংসদীয় রাজনীতিতে ভোট ভাগ হওয়ার কথা বলাই অন্যায়। যদি ভয় হয় তাহলে এক প্ল্যাটফর্মে আসছে না কেন? আমি চাই মানুষের স্বার্থে ভোট ভাগ না হয়ে এক জায়গায় হয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষকে ৭৪ বছরের অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে।"

বিজেপি সম্পর্কে কী ধারণা আপনার? অনেকেই বলছেন আপনি ভোট কাটলে বিজেপির সুবিধা হবে। "বিজেপি দেশের বড় ক্ষতি করছে। সরকারি সংস্থা বিক্রি করে দিচ্ছে। দেশকে ধ্বংস করছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিজেপির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব নয়। কৃষকদের পক্ষে আমরা। যাঁরা কৃষকদের বিরোধিতা করবে আমরা তার বিরুদ্ধে।" তাঁর প্রশ্ন, "২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে কী করে বিজেপি ১৮ টা আসন পেয়েছিল। তখন কী আমরা রাজনীতির ময়দানে ছিলাম? ভোট কেটেছি? রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্তর জন্য তৃণমূলই দায়ী।" বিজেপির দিকে মানুষ নেই। ইভিএমে ভোট না হলে বিজেপি এখানে হারবেই, মত ভাইজানের।

তৃণমূল তো মুসলিম তোষণ করছে। এমন অভিযোগ রয়েছে রাজনীতিতে। এই প্রসঙ্গে ভাইজানের বক্তব্য, "তৃণমূলের মুসলিম তোষণ একটা বিজ্ঞাপণ মাত্র। বাস্তবে মুসলমানদের এমন জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যে বেঁচে থাকাই মুশকিল।"

মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েসি ৩ জানুয়ারি এসেছিলেন ফুরফুরা শরিফে। সেখানে বৈঠক করেছেন আব্বাসের সঙ্গে। তবে ভাইজানের কথায়, হায়াদ্রাবাদের পার্টি কেন করব। আমি বাংলার ছেলে। বাঙালির জন্য দল গঠন করব। উনি আমার পরামর্শ নিতে এসেছিলেন। অন্য রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বও আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন।

তাঁর রাজনৈতিক দলে বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন ভাইজানের ভাই পীরজাদা নৌশাদ সিদ্দিকি। ইতিহাসে স্নাতকোত্তর। বিএড। সামনে থেকে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেবেন ২৬ বছরের যুবক। এখন সে আমার সঙ্গে ঘুরছে। জানালেন, ভাইজান।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

West Bengal Abbasuddin Siddiqui
Advertisment