জয়প্রকাশ দাস
হালে অনুষ্ঠিত পঞ্চায়েত ভোটে দলের নীচু তলায় বিজেপিসখ্য়তা নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব এখনও বেজায় বিড়ম্বনায় রয়েছে। দলের নেতৃত্বের একাংশ এই নিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছে সূর্যকান্ত মিশ্র-বিমান বসুদের ওপর। ঠিক এই সময়েই মহেশতলার উপনির্বাচনের দিন সিপিএমের বুথ ক্য়াম্প থেকে তৃণমূলকে হটাতে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে জোট বাঁধার দাবি উঠল। সেই দাবিকে জোরালো সমর্থন জানাল বিজেপি। দুই দলের বুথ ক্য়াম্পও হয়েছে গায়ে গায়ে।
এখন মোটামুটি পরিষ্কার, তৃণমূল বিরোধিতায় সিপিএম এবং বিজেপির নীচু তলার কর্মীরা যে জোটবদ্ধ হতে চাইছেন, তা নিয়ে তাঁরা আর লুকোছাপাও করছেন না। মহেশতলার শ্য়ামপুরের ২৭১-২৭৪ নম্বর নির্বাচনী বুথ ক্য়াম্পে পাশাপাশি বসেছে সিপিএম ও বিজেপি। শুধু তাই নয়, সকাল থেকে নিজেদের মধ্য়ে চলছে দেদার টিফিন, চা-বিস্কুট লেনদেন। সিপিএমের টেবিল থেকে কর্মীরা বলছেন, "আমরা বিজেপির দেওয়া চা খাচ্ছি!" বিজেপির কর্মীদের বক্তব্য়, "আমরা ওদের কাছ থেকে টিফিন নিয়েছি।" দিনভর হাসিঠাট্টার মধ্য়ে সময় কাটাচ্ছে মতাদর্শগত ভাবে একেবারে বিপরীত মেরুর দুই রাজনৈতিক দল।
আরও পড়ুন, Assembly by-elections 2018: মহেশতলায় ত্রিমুখী লড়াই
দুটি নির্বাচনী বুথ ক্য়াম্প থেকেই দাবি উঠেছে, "তৃণমূল কংগ্রসকে পরাজিত করতে সিপিএম ও বিজেপির মধ্য়ে জোট করতে হবে। আমরা একযোগে লড়াই করে হারাতে চাই তৃণমূলকে। ওপরতলারনেতৃত্বের কাছে এটাই আমাদের দাবি।" সিপিএমের মানস বোস, কান্তিকুমার দত্তর বক্তব্য়, তৃণমূলকে হারাতে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধতে কোনও অসুবিধা নেই। "আমাদের প্রধান দাবি, রাজ্য় থেকে তৃণমূল কংগ্রসকে হটানো। গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচন করা দরকার। সেক্ষেত্রে সাধারন মানুষকে যে দল বাছবেন সেই সরকার গড়বে।"
সিপিএম কর্মীরা যখন এই দাবি জানাচ্ছেন, তখন পাশ থেকে মাথা নেড়ে সেই দাবি সমর্থন করছেন বিজেপি কর্মীরা। বিজেপির অশোক কুমার সিং বলেন, "এখন লক্ষ্য় একটাই, তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্য়ুত করা। নির্বাচনে নানা ভাবেই জোট হতে পারে।" বিজেপির যুব নেতা তুহিন চট্টোপাধ্য়ায়ের বক্তব্য়, "এভাবে পাশাপাশি ক্য়াম্প করে আমরা একটা জোট বার্তা দিতে চাই। তৃণমূলকে হারাতে হলে প্রয়োজনে সিপিএমের সঙ্গে জোট করতে হবে। রাজ্য়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনাই আমাদের প্রধান কাজ।"
সূত্র অনুযায়ী, সদ্য় সমাপ্ত গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়া, নদিয়া-সহ উত্তরবঙ্গের নানা জায়গায় গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে জোট করেছেন স্থানীয় সিপিএম নেতা ও কর্মীরা। কোন কোন ক্ষেত্রে সিপিএম কর্মীরা প্রার্থী হয়েছেন বিজেপির তরফে, ওপরতলার নেতাদের তোয়াক্কা না করেই। একদিকে যখন কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী প্রকাশ কারাত, সীতারাম ইয়েচুরিরা, তখন বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে গদিচ্য়ুত করতে উদ্য়ত দলের নীচুতলার কর্মীরা। মহেশতলার এই উপনির্বাচনে কংগ্রেস সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে প্রার্থী দেয়নি। সরাসরি সমর্থন করেছে সিপিএম প্রার্থীকে। সেই প্রেক্ষিতে নির্বাচনের দিন শ্য়ামপুরে বিজেপি ও সিপিএম কর্মীদের একযোগে জোটের দাবি উড়িয়ে দেওয়ার নয়।