রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডের জেরে বেনজির তুলকালাম অবস্থা বিধানসভায়। হাতাহাতি, মারামারিতে জড়ালেন বিজেপি ও তৃণমূল বিধায়করা। পোশাক ছিঁড়ল বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গার। আহত গেরুয়া দলের ৮ থেকে ১০ জন বিধায়ক। উল্টোদিকে, নাক ফেটেছে তৃণমূলের অসিত মজুমদারের। আহত বিধায়কের অভিযোগ, বিরোধী দলনেতা তাঁকে আঘাত করেছেন, চশমা ভেঙে দিয়েছেন।
বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, আলোচনার সময় সাদা পোশাকে বিধানসভায় অন্দরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তৃণমূল বিধায়ক ও সিভিল ড্রেসের পুলিশই বিজেপি বিধায়কদের মেরেছে।
এ দিন শুরুতেই বগটুইকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে সভায় ২ ঘন্টা আলোচনার আনুরোধ করেন পদ্ম বিধায়করা। আইন মেনে আলোচনার কথা বলে বিরোধী বিধায়কদের দাবি খারিজ করে দেন স্পিকার। এরপরই ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা। স্পিকারের চেয়ারও ঘিরে ধরেন তাঁরা। মহিলা নিরাপত্তা রক্ষীদের সুরক্ষার কথা বলে বিক্ষোভকারী বিধায়কদের সরে যেতে বলছিলেন স্পিকার। অভিযোগ, সে সময় তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক ওই জায়গায় চলে আসেন। শুরু হয় শাসক ও বিরোধী দলের বিধায়কদের হাতাহাতি। একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন উভয় দলের বিধায়করা।
তৃণমূলের দাবি, বিজেপি বিধায়করা বিধানসভায় ভাঙচুর চালিয়েছে। আলো ভেঙে দিয়েছে। সেক্রেটারিয়েট টেবিলের কাগজপত্রও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। স্পিকার।
এই হাতাহাতি, মারামারির পরই ওয়াক আউট করেন বিজেপি বিধায়করা। অধিবেশন কক্ষের বাইরে বেরিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'রামপুরহাট নিয়ে সরকারি সব পদক্ষেপ বিধানসভার বাইরে ঘোষণা করছেন পুলিশ মন্ত্রী। আমরা বারাসতের ঘটনা ঘটতে দেখছি। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। আমরা সব কাজ ফেলে তা নিয়ে আলোচনার দাবি করেছিলাম। স্পিকার তার অনুমতি দেননি। আমরা গণতান্ত্রিক রীতি মেনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলা। তখনই তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনীর সদস্য, যাঁরা পোস্ট পোল ভায়োলেন্সে যুক্ত ছিলেন সেই শওকত মোল্লা, রবিম বক্সি, তপন চ্যাটার্জীরা আমাদের কয়েকজন সদস্যদের উপর হামলা চালালো। স্পিকারের সামনে মনোজ টিগ্গা, তাপসী মণ্ডল, সুশীল বর্মন সহ ৮ জনকে মারধর করা হয়েছে। বিধায়নসভায় বিরোধী কণ্ঠস্বর রোধ করার চেষ্টা চলছে এটাতে তা ফের প্রমাণিত।'
এরপরই বিস্ফোরক অভিযোগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, 'বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে সিভিল ড্রেসে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। বিধায়কদের নিরাপত্তা রক্ষীদের নিয়ে হামলা করানো হচ্ছে।'
পাশাপাশি বিরোধী দলনেতার হুঁশিয়ারি, 'আমরা স্পিকারের কাছে এই ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি করে সুবিচার চাইবো। কিন্তু, জানি তা পাব না। তাই আক্রান্ত বিধায়কদের মেডিক্যাল করিয়ে ন্যায় বিচারের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হবো।'
তবে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, স্পিকার এ দিনের নজিরবিহীন ঘটনার জন্য শুভেন্দু সহ ৫ বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করেছেন। সাসপেন্ডেড বাকি চার বিধায়ক হলেন মনোজ টিগ্গা, শঙ্কর ঘোষ, নরহরি মাহাতো ও দীপক বর্মা। বিধানসভার অধিবেশন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত এই পাঁচ বিজেপি বিধায়ক অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন না। সোমবারের হাঙ্গামায় বিদানসভার সম্পত্তির কী কী ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোমবারের ঘটনায় বিধানসভার কী কী সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখে হবে বলে জানিয়েছেন স্পিকার।
পাল্টা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, 'স্পিকার ভিতরে অধিবেশন চালাবেন, আর আমরা প্রত্যেকদিন এখানে এসে বাইরে বিধানসভা চালাব। যাদের ভোট মমতা পাবেন না সেই অভিযাত হিন্দু, ব্রাহ্মণ, দলিত, আদিবাসীদের প্রতিনিধিদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে মনে রাখবেন আনরাও ২ কোটি ২৮ লক্ষের প্রতিনিধি।'