Advertisment

২০১৯-এর লোকসভায় টিকিট অনিশ্চিত তৃণমূলের ৯ বর্তমান সাংসদের! দেখে নিন, তালিকা

সূত্রের খবর, প্রায় ৮-১০ জন সাংসদ নানা কারণে টিকিট নাও পেতে পারেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্যজনিত কারণ যেমন রয়েছে, তেমন কোনও কোনও সাংসদের পাঁচ বছরের রিপোর্ট কার্ড না-পসন্দ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
tmc, panchayat vote

লোকসভায় কি টিকিট মিলবে? প্রশ্ন তৃণমূলের অন্দরে। ছবি- পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

২০১৯ লোকসভা নির্বাচেন তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্য ৪২-এ ৪২। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ঘাসফুলের আঘাতে মূর্ছা গিয়েছিল কাস্তে-হাত-পদ্ম। বিরোধীদের মধ্যে চারটি আসন পেয়ে কিছুটা মান রেখেছিল কংগ্রেস। সর্বভারতীয় স্তর সাপেক্ষে ভাল ফল বলা যায়। কিন্তু ৩৪টি আসনে জয় পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সর্বভারতীয় স্তরে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক ভাবে মর্যাদা বেড়েছে তৃণমূলের। কিন্তু সূত্রের খবর, তৃণমূলের সব জয়ী সাংসদ এবার নির্বাচনের টিকিট পাচ্ছেন না। পাশাপাশি দু'এক-জন সাংসদের আসন পরিবর্তন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisment

সূত্রের খবর, প্রায় ৮-১০ জন সাংসদ নানা কারণে টিকিট নাও পেতে পারেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্যজনিত কারণ যেমন রয়েছে, তেমন কোনও কোনও সাংসদের পাঁচ বছরের রিপোর্ট কার্ড না-পসন্দ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। দল মনে করছে, বেশ কয়েকজন সাংসদ এলাকার উন্নয়ন ঠিক মতন করতে পারেন নি। পাশাপাশি, সাংগঠনিক ভাবেও অনেকটা ব্যর্থ তাঁরা। আর দল এমন কাউকে টিকিট দেবে না যিনি দলের কথা না মেনে নিজের মত "বিপ্লব করতে" বদ্ধপরিকর।

আরও পড়ুন: উৎসবের মাসেও নানা ঝামেলায় জড়িয়েছে তৃণমূল, ক্ষুব্ধ শীর্ষ নেতৃত্ব

চৌধুরী মোহন জাটুয়া

কারা থাকতে পারেন না-পাওয়ার তালিকায়? দক্ষিণ ২৪ পরগণার মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রে গত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন প্রবীণ নেতা চৌধুরী মোহন জাটুয়া। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও ছিলেন। সূত্রের খবর, জাটুয়া এবার টিকিট নাও পেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, বয়সের কারণেই তাঁকে সরতে হবে, কারণ তিনি খুব একটা ছোটাছুটি করতে পারছেন না বলেই দলের ধারনা। গেরুয়া শিবির যেভাবে রাজ্যের নানা অংশে কর্মসূচি নিচ্ছে, তাতে দৌড়ঝাঁপ করার মত নেতার প্রয়োজন দলের। নভেম্বরে বিজেপির একটি রথ যাত্রা শুরু করছে এই জেলা থেকেই

তাপস পাল

কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল এবার কোনভাবেই টিকিট পাবেন না বলে মনে করছে দলের একাংশ। তাঁর কুখ্যাত "বাড়িতে ছেলে ঢুকিয়ে দেব" থেকে শুরু করে রোজ ভ্যালি কাণ্ডে গ্রেপ্তার, পারিবারিক বিবাদ সহ নানা অভিযোগ রয়েছে এই সাংসদের বিরুদ্ধে। গত কয়েক বছর এসবই বেশি আলোচনার বিষয় ছিল রাজ্যে। সূত্রের খবর, 'দাদার কীর্তি'-র নায়কের কার্যকলাপ নিয়ে অনেক হ্যাপা পোহাতে হয়েছে দলকে। গত সাড়ে তিন বছরে তাঁর এলাকার সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করতে দল এই নায়ক সাংসদকে কোনও কাজে পায়নি। উন্নয়নের কাজে পাশে থাকা দূর অস্ত। অনেক আগেই তিনি বাদের তালিকায় চলে গিয়েছেন।

অনুপম হাজরা

বোলপুরের অধ্যাপক সাংসদকে নিয়েও অনেক বিড়ম্বনা সহ্য করতে হয়েছে দলকে। তাঁর হঠাৎ হঠাৎ ফেসবুক পোস্টই এবার তাঁর টিকিট পাওয়ার অন্তরায় বলে মনে করছে দলের একটা বড় অংশ। দলকে তোয়াক্কা না করে মন্তব্য করা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন এই সাংসদ। অনুপম হাজরার সঙ্গে কিছু মানুষের ঘনিষ্ঠতাও দল মেনে নিতে পারেনি। সূত্রের খবর, প্রার্থী তালিকায় এঁর নামের পাশে কাটা চিহ্ন পড়ে গিয়েছে অনেক আগেই।

আরও পড়ুন: তৃণমূল ডিফেন্সিভ, আমরা অফেন্সিভ হয়ে গিয়েছি, দাবি দিলীপ ঘোষের

প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রার্থী তালিকায় হাওড়া লোকসভার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। সূত্রের খবর, প্রাক্তন এই ফুটবলারের টিকিট পাওয়া নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। নারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত বলে টিকিট পাবেন না এমন কিন্তু নয়। দলীয় সূত্রে খবর, সাংসদ হিসাবে তাঁর কাজে দল একেবারেই খুশি নয়। সাংগঠনিক কাজেও দল ক্ষুব্ধ। দলে রটনা রয়েছে, সেখানে প্রভাবশালী প্রার্থীর নাম আলোচনায় উঠে আসছে।

অপরূপা পোদ্দার

সূত্রের খবর, টিকিট না পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দারও। এই সাংসদও নারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত। কিন্তু দলের মনে করছে, অপরূপা সাংসদ হিসাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকী সাংগঠনিক কাজও ঠিক ভাবে করতে পারেন নি বলে দল মনে করছে। তাই এবারে তাঁর টিকিট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

সৌমিত্র খাঁ

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে বাঁকুড়ার বিষ্ণপুর কেন্দ্রের জয়ী প্রার্থীরও। গতবার সেখানে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল কংগ্রেস থেকে আসা সৌমিত্র খাঁকে। তাঁকে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতিও করা হয়েছিল। তারপর তাঁকে হঠাৎ সরিয়েও দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, দল মনে করছে তিনি জনৈক নেতার বেশ ঘনিষ্ঠ। এই ঘনিষ্ঠতাই তাঁর টিকিট না পাওয়ার ক্ষেত্রে কাল হতে পারে।

সন্ধ্যা রায়

সূত্রের খবর, শারীরিক অসুস্থতার জন্য এবার অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ও টিকিট না পেতে পারেন। কারণ, তাঁর পক্ষে দৌড়ঝাঁপ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া নামে কাটলেও দলের সংগঠনের কোন কাজ তাঁর পক্ষে করা সম্ভব নয়। এই টিকিট না পাওয়ার সঙ্গে বেশ কয়েকজন সাংসদ রয়েছেন যাঁদের আসন পরিবর্তন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়ের আসন বদলাতে পারে। তিনি কৃষ্ণনগরের প্রার্থী হতে পারেন।

আরও পড়ুন: বিজেপির রথযাত্রায় থাকছেন দেড় হাজার কর্মী, আইনজীবী, রথের মেকানিক

মমতাজ সংঘমিত্রা রায়

বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে ২০১৪ সালে জয় পেয়েছিলেন মমতাজ সংঘমিত্রা রায়। আদ্যোপান্ত কমিউনিস্ট পরিবারের মেয়ে হলেও তাঁকে গতবার টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্রের খবর, তাঁর কাজেও দল তেমন একটা খুশি নয়। এই কেন্দ্রে একেবারে নতুন মুখ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দীনেশ ত্রিবেদী

উত্তর ২৪ পরগণার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে নিয়ে দলের স্থানীয় স্তরের নেতৃত্বের একটা বড় অংশ খুশি নন। বেশির ভাগ অংশই তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না। সূত্রের খবর, শুধু স্থানীয় স্তর নয়, অনেক সময়ই দলের শীর্ষস্তরের সঙ্গেও তাঁর সেভাবে অালাপ-অলোচনা হয় না। সাংগঠনিক বিষয় দেখার তেমন প্রশ্নই নেই। জানা গিয়েছে, যেহেতু জাতীয় স্তরে দীনেশ ত্রিবেদীর যোগাযোগ অন্য অনেক সাংসদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি, এবং তিনি রেলমন্ত্রীও ছিলেন, তাই প্রার্থী হওয়া নিয়ে সংশয় থাকলেও কিছুটা দোদুল্যমান রয়েছে দল। এদিকে এই কেন্দ্রের টিকিট পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন দোর্দন্ডপ্রতাপ এক নেতা। তবে সাংসদ প্রার্থী হিসাবে তাঁকে কতটা ভরসা করা যায় তাও ভাবছে দলের একাংশ।

আরও পড়ুন: খোল করতালে প্রায় দু কোটি টাকা খরচ বীরভূম তৃণমূলের, প্রচারে নামবেন কীর্তনীয়ারা

দল এও খতিয়ে দেখছে, কোন সাংসদরা গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। সূত্রের খবর, সম্প্রতি তৃণমূল ভবনে এক বৈঠকে দলের ৮-৯ জন সদস্য বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেহের তালিকা ক্রমশ বাড়ছে ঘাসফুল শিবিরে। তাই বিধায়ক-মন্ত্রী ছাড়াও অনেক সাংসদ রয়েছেন এই তালিকায়, মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এদিকে বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে একসময় তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড এবং বর্তমানে বিজেপির সেনাপতি মুকুল রায় মন্তব্য করেছেন, প্রায় শ'দেড়েক বিধায়ক তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ২০১৯-এর পর ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন আরও হাড্ডাহাড্ডি হবে। সেক্ষেত্রে মমতা নিজের টিমকে আরও সুসজ্জিত করতে চাইবেন। তাই লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবার অনেক সতর্ক থাকবেন তিনি।

tmc Mamata Banerjee trinamul
Advertisment