ক্রমশ অস্বস্তি বাড়ছে তৃণমূলের। মঙ্গলবার দুপুরেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে দল ও মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন লক্ষ্ণীরতন শুক্লা। আর বিকেলেই বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে পৌঁছে গেলেন ডায়মণ্ডহারবারের তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদার। গত কয়েক মাস ধরেই 'বেসুরো' দীপক হালদার। তার মধ্যেই বিজেপি নেতার বাড়িতে এ দিন তাঁর আচমকা উপস্থিতি ঘিরে নানা রাজনৈতিক জল্পনা তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে এদিনের বৈঠকে ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ আবু তাহের ও জেলার আরও দুই স্থানীয় স্তরের নেতা।
তাহলে কী ঘাস-ফুল ছেড়ে পদ্ম-মুখী দীপক হালদার? জবাবে, ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল বিধায়ক বলেন, 'দল ছাড়ার কোনও কথা হয়নি। নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ। শোভনবাবুর সঙ্গে অনেক দিন ধরেই আমার পরিচয়। তাই দেখা করতে এসেছিলাম। এই সাক্ষাতের সঙ্গে কোনও রাজনীতির যোগ নেই।' সূত্রের খবর, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে এদিন প্রায় প্রায় ঘন্টা দু'য়ের ছিলেন দীপকবাবু। ফলে তৃণমূল বিধায়কের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
দেড় বছর আগে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় কানন ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এতদিন দলের সঙ্গে বিস্তর মান-অভিমানের পালা চলছিল তাঁদের। সম্প্রতি গেরুয়া দলে পদ পেয়েছেন শোভন-বৈশাখী। যদিও দলে পদ পেলেও পথে নামেননি তাঁরা। সোমবার আলিপুর থেকে দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত ব়্যালিতে যোগ দেননি শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছিল এই ব়্যালিতেই দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকজন তৃণমূল কাউন্সিলর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার শাসক দলের একাধিক নেতার পদ্ম বাহিনীতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। এই প্রেক্ষাপটে এদিন শোভন চট্টোপাধ্যের বাড়িতে ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদারের উপস্থিতি বেশ তাৎপর্যবাহী।
আরও পড়ুন- মন্ত্রিত্ব-তৃণমূল ছাড়লেন লক্ষ্মীরতন, সিদ্ধান্তকে স্বাগত মমতার
এদিকে, দলের বিরুদ্ধে বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই প্রকাশ্যে ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন ডায়মম্ডহারবারের তৃণমূল বিধায়ক। গত বছর শেষের দিকে ডায়মন্ডহারবারে সভা করেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেখানে ছিলেন না তৃণমূলের দীপক হালদার। সভায় তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর পদ্ধতি নিয়ে দলের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন শাসক দলের ওই বিধায়ক। কেন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দীপকবাবু।
গত সাড়ে চার বছর ধরে দলে তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ দীপক হালদারের। 'বেসুরো' হওয়ার মাঝেই একবার তিনি বলেছিলেন, নিজের পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ সম্পর্কে আগামী ১৫ জানুয়ারির পরে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। যা বেশ ইঙ্গিতবাহী। তা স্থির করতেই কী দীপকবাবু বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গেলেন? শাসক শিবিরের অন্দরেই তুঙ্গে জল্পনা।
তৃণমূল সূত্রে খবর, এর মধ্যেই টিম পিকে দীপক হালদারের সঙ্গে দেখা করেছে। কিন্তু তাতে কী শেষ রক্ষা হবে? নজরে ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল বিধায়কের রাজনৈতিক অবস্থান।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন