তোরা আগারওয়াল
উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে সংগঠন বাড়িয়ে বিরোধী দলের তকমা পেতে মরিয়া তৃণমূল। সুস্মিতা দেব, মুকুল সাংমাকে আগেই দলে নিয়েছে তৃণমূল। এবার হাত ছেড়ে জোড়া-ফুলের পতাকা ধরেছেন আসমের যুব নেতা রিপুন বোরা। তাঁকে হাতিয়ার করেই আপাতত বিজেপি শাসিত আসমে সংগঠনকে পোক্ত জমির উপর খাড়া করতে চাইছে বাংলার শাসক দল।
গত রবিবার কংগ্রেসের যুব নেতা রিপুন বোরা অপ্রত্য়াশিতভাবেই তৃণমূলে যোগদান করেছেন। যা কংগ্রেসের কাছে ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, এই যোগদানে উত্তর-পূর্বে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে বলেই আশা তৃণমূলের।
সুস্মিতা দেব অসমের বরাক উপত্যকায় উল্লেখযোগ্য বাঙালি মুখ। যিনি বর্তমানে ত্রিপুরায় তৃণমূলের সংগঠনকে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। মুকুল সাংমা সহ ১১ জন বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। ফলে মেঘালয়ে এখন বিরোধী দল তৃণমূলই। সাংমা বিরোধী দলনেতা।
তবে, রিপুন বোরার দলত্যাগকে তেমনভাবে দেখছে না কংগ্রেস। অসমের বিরোধী দলনেতা দেবব্রত সাইকার প্রশ্ন, একুশের ভোটে রিপুন তাঁর নিজের কেন্দ্র থেকেই জেতেননি। তাহলে সে কীভাবে শক্তিশালী নেতা হতে পারে? সুস্মিতা দেবের কথায়, 'বোরার মূল্যায়ণ ঠিক মতো হয়নি। তৃণমূলে অসমে সংগঠন বিস্তারের লক্ষ্য নিয়েছে। তাতে বোরার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে।'
যদিও এখনও অসমে তৃণমূলের কার্যকলাপ বা প্রভাব সেভাবে পড়েনি। সুস্মিতা দেবের দাবি, 'অসমে বিরোধী দল বিশ্বাযোগ্য নয়। আপাতত তৃণমূল সেই বিশ্বাস অর্ঝনের লক্ষ্যেই কাজ করবে।' নিজের দাবির পক্ষে রাজ্যসভার ভোটে ক্রস ভোটিংয়ের অভিযোগ তুলে ধরেছেন সুস্মিতা দেবী। তাঁর কথায়, 'রাজ্যসভা ভোটে এআইইউডিএফের বেশ কয়েকজন বিধায়ক বিজেপির প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। অথচ কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ যৌথভাবে রিপুন বোরাকে প্রার্তী করেছিল। এই ক্রস ভোটিংয়ের জেরেই ভোটে হেরে গিয়েছেন বোরা। যা তাঁর কংগ্রেসের প্রতি তিক্ততা বাড়িয়েছিল। আর ওই ভোট থেকেই প্রমাণিত যে, বিজেপি, কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ একসূত্রে গাঁথা।'
তৃণমূল মরিয়া। উত্তর-পূর্বের বহু বড় রাজনৈতিক নাম এখন জোড়া-ফুলের ধুলিতে। তবে সংগঠন বিস্তার ও উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধী দলের তকমা জোটানোর বিষয়টি অত সহজ হবে না তাদের পক্ষে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার অধীনে আসামে বিজেপির আধিপত্য এবং তৃণমূলের 'বাঙালি' তকমা- সেরাজ্যে অসমিয়া উপ-জাতীয়তাবাদের পরিপন্থী, এই দুটিই তৃণমূলের অসমের যাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। আসামের কংগ্রেস সাংসদ আব্দুল খালেক তৃণমূলকে "কলকাতা কেন্দ্রিক দল" বলে কটাক্ষ করেছে।
কিন্তু সুস্মিতা দেব বিজেপিকে "বহিরাগত" দল বলে বিঁধেতার উত্থানের বিষয়টি স্মরণ করাতে চেয়েছেন। রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন, 'বিজেপি এখন জাতিগতভাবে সমস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করেছে। তাহলে কেন অসমীয়া হিন্দু, উপজাতি এবং বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে এই তথাকথিত বিভাজন করা হচ্ছে?'
শিলচর-ভিত্তিক রাজনৈতিক ভাষ্যকার জয়দীপ বিশ্বাস মনে করেন, 'তৃণমূল ধর্মনিরপেক্ষ দল বলে পরিচিত। ফলে অসমের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কাছে এই দল পছন্দের হতে পারে। তবে আগামিতে তাদের উত্তোরণের পথ খুব সহজ হবে না। এখন পর্যন্ত তারা শুধুমাত্র একটি টপ-ডাউন পদ্ধতি অনুসরণ করেছে, বড় বড় রাজনৈতিক নামগুলি নিজেদের ঝুলিতে পুড়ছে, তবে বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী হয়ে উঠতে পারে কিনা তা কেবল সময়ই বলে দেবে।'
Read in English