রাজ্য মন্ত্রীসভার একাধিক বৈঠকে গড়হাজির থেকেছেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন হাওড়ায়, আর তিনি জোমজুরের বিধায়ক। 'মতান্তর' দূর করতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। হাওড়া উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লা মন্ত্রীত্ব ও জেলা সভাপতির পদ ছেড়েছেন। দলের প্রবীণ বিধায়ক জটু লাহিড়ী, প্রবীণ নেতা বাণী সিংহ রায় থেকে হাওড়ার প্রাক্তন মেয়রও বেসুরো গাইছেন। শেষমেশ বাম আমল থেকে জয়ী জগদীশপুরের পঞ্চায়েত প্রধান রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সরাসরি দলের প্রতি বিদ্রোহী হয়েছেন। এমাসের শেষেই হাওড়ায় সভা করার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। রাজনৈতিক মহল ক্রমশ যেন ক্রণোলজির গন্ধ পাচ্ছে।
নেতা, বিধায়ক, মন্ত্রী এবারে বিস্ফোরক তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান। সাংবাদিক বৈঠকে নাম করে সরাসরি আক্রমণ করেছেন মন্ত্রী অরূপ রায়কে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড গিমিক বলে তোপ দেগেছেন এই পঞ্চায়েত প্রধান। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত ভরাডুবি হবে বলে তিনি আগাম ঘোষণাও করেছেন। জগদীশপুরের পঞ্চায়েত প্রধান গোবিন্দ হাজরা বলেন, "কালীঘাটে দিদির মিটিংয়ে ডাক পেলেও জেলায় কোর কমিটির মিটিংয়ে ডাকে না। চোর-গুন্ডারা জেলা কমিটিতে এসেছে। ভাল লোকেদের নিয়ে কমিটি করলে দলের এমন হাল হতো না। হাওড়ায় ভরাডুবি অনিবার্য। এক এক করে যাবে। এই ভাঙন রোধ করা যাবে না।" গোবিন্দবাবুর আক্ষেপ, "২০০৩ সিপিএমের প্রবল হাওয়ায় এই পঞ্চায়েত দখল করেছিলাম। এসব বলার জন্য কোপ পড়লে পড়বে তাতে কী যায় আসে।"
বুধবার সকালে সাংবাদিকদের সামনে দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র ডঃ রথীন চক্রবর্তী। "তৃণমূল দল থেকে বিদায় নিয়েছে সৌজন্যবোধ" এই ভাষায় নিজের ক্ষোভ ব্যাক্ত করেছেন তিনি। তিনি জানান, হাওড়ার মানুষের জন্য জল প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন। সেই প্রকল্পের উদ্বোধনে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় এই ভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর অভিমত, "এখানে শুধু নেতার ঘনিষ্ঠ কারও কথা শুনে চলাই রীতি। অন্য কিছুই দেখা বা শোনা হয় না।" চোখ, কান ইত্যাদি ইন্দ্রিয়গুলো ঢাকা পড়ে রয়েছে, মন্তব্য প্রাক্তন মহানাগরিক। তাঁর মন্তব্য, এখানে যাঁরা কাজ করে তাঁদের এক ঘরে করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়।
লক্ষ্মীরতন শুক্লা সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়ার সেই পদে নিযুক্ত হয়েছেন ভাস্কর ভট্টাচার্য। ভাস্করবাবু বলেন, "আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। বড় দল, সরকারে আছে ১০ বছর। সেখানে দলের সমস্ত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সকলকে নিয়েই আমি চলার চেষ্টা করব। যাতে ২০২১-এর নির্বাচনে দিদি তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়। সেটাই সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত। নিজেদের মধ্যে মান-অভিমান থাকলে দলীয় নেতৃত্বে বা শীর্ষ ফোরামে আমাদের মতামত ব্যক্ত করার সুয়োগ আছে। জেলা নেতৃত্বের ওপর ক্ষোভ থাকলে রাজ্য নেতৃত্বকে বলা যেতে পারে। পঞ্চায়েত প্রধান কী করণে বলেছে, চেষ্টা করব তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে।"
এবার যেন লক্ষ্য হাওড়া জেলা। রাজ্যজুড়ে বিজেপির যোগদান মেলা চলছে। অমিত শাহ রাজ্যে এলে ফের বড় ধরনের যোগদানপর্ব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি মাসের শেষে হাওড়ায় জনসভা করার কথা রয়েছে অমিত শাহর। সেই কর্মসূচিতে কারা কারা হাজির থাকেন সেটাই দেখার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন