সময়ের সঙ্গে তাল রেখেই রাজনীতির মোড়কের আমূল বদল ঘটেছে। তা পোষাকেই হোক বা সভা-সমাবেশ। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন যেন নানা ঘটনায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলা এমন নির্বাচনী পরিস্থিতি আগে কখনও দেখেনি। অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান কত বেশি রাজনৈতিক হতে পারে তা-ও দেখল রাজ্যবাসী।
পরাধীন ভারতে ভজন-কীর্তনের আড়াতে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এককাট্টা হতেন, গোপন বৈঠক করতেন। ইংরেজ সরকারকে ফাঁকি দিতে এটাই ছিল পন্থা। এটা যদিও অনেক বড় ব্যাপার। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই জনসংযোগ রক্ষা করতেন। রংবিহীন অনুষ্ঠানে সাড়াও মিলত বেশি। বিরোধী মনস্করাও সেখানে হাজির থাকতেন। এখন এই সব দৃশ্য ক্রমশ উধাও হয়ে যাচ্ছে। বিশেষত তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান করতেই সংশয়ে ভুগছেন। পাছে "শুভেন্দু ছাপ" লেগে যায়। তাই অত্যন্ত সতর্ক।
নামপ্রকাশ্যে অনেচ্ছুক এক জেলা তৃণমূল নেতার কথায়, "কয়েক হাজার কম্বল বিতরণ করার কথা রয়েছে। দলীয় পতাকা ছাড়া অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান করার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু পাছে কোনও ছাপ পড়ে যায় শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছি দলীয় সভা করেই কম্বল বিতরণ করা হবে। ভোটের আগে এই ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব না। কারণ, এখন অরাজনৈতিক সভা করলে দলের মধ্যেই জল্পনা তৈরি হবে। কাজ করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়ব।" রাজনৈতিক মহলের মতে, দলে না থেকেও শুভেন্দু পর্ব যেন পিছু ছাড়ছে না।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, গতবছর জুলাইয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকে দলীয় ব্যানারে কোনও সভা করেননি শুভেন্দু অধিকারী। বিজয়া সম্মেলনী, পদযাত্রা, স্বাধীনতা সংগ্রামী স্মরণ সহ নানা অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে তিনি হাজির থেকেছেন। দলও কড়া সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। এভাবেই কেটে গিয়েছে প্রায় ৬ মাস। শেষমেষ ১৯ ডিসেম্বর বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। সেই থেকে অরাজনৈতিক কর্মসূচি বাংলার রাজনীতিতে অন্যমাত্রা যোগ করেছে। অভিজ্ঞমহলের মতে, অরাজনৈতিকের অর্থ কত বেশি রাজনৈতিক হতে পারে তা সম্প্রতি শুভেন্দুর কর্মপদ্ধতি জানান দিয়েছে। তাই দলের একাংশ অরাজনৈতিক কর্মসূচির কথা চিন্তাতেই আনছেন না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন