নেতাজির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উপস্থিত থাকাকালীন সরকারি অনুষ্ঠানে 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ নাকচ এখন বঙ্গ রাজনীতির বহুল চর্চার বিষয়। তবে তৃণমূল দলের নেতাদের দাবি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির এই 'কাণ্ডজ্ঞানহীনতাই' তাঁদের লড়াইয়ের ময়দানে যথেষ্ট সাহায্য করবে।
নেতারা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন যে এই বিষয়টি অত্যন্ত 'সংবেদনশীল'। তৃণমূল নেতাদের মত, তাঁরা কখনই বলেননি দল 'জয় শ্রী রাম' বলার বিপক্ষে। বরং বাংলার আবেগ- অনূভূতিকে না বোঝা 'বহিরাগত'রা এক মেরুকরণ রাজনীতি তৈরির চেষ্টা করছে বাংলায়। যা ক্ষতিকর। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেন যে তৃণমূল এই স্লোগান বিষয়টিকে মুখ্যমন্ত্রীর অপমান হিসেবেই দেখছে তা নয়। নেতাজির জন্মদিনে কেন এমন স্লোগান তোলা হবে সেই বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে তাঁদের।
তিনি বলেন, "এটা ঠিক রামভক্তসুলভ নয়। যদি কেউ রাম নবমীর দিন অন্য কোনও স্লোগান দেয় কেমন লাগবে তখন? নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের ১২৫ তম জন্মদিনে আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য যিনি প্রাণ দিয়েছিলেন, আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যদের শ্রদ্ধার প্রতীক হিসাবে যে স্লোগান উত্থাপন করা উচিত তা হ'ল জয় হিন্দ। অন্য কোনও স্লোগান নয়।"
সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, "এই ধরনের অনুষ্ঠানে কেবল আমন্ত্রিতদেরই অনুমতি দেওয়া হয় থাকার। এখানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা রক্ষা করা উচিত ছিল। লোকেরা অন্য কোনও অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান তুলতেই পারে। আমার কোনও আপত্তি নেই। তবে একটি নির্দিষ্ট দিনে যখন সকলে নেতাজি এবং আইএনএ-কে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে, তখন এই লোকদের কীভাবে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সেখানে থাকার? জানতে পারা গিয়েছে যে তারা বিজেপির এক বহিরাগত নেতার অনুগামী। আমাদের আশঙ্কা যে বহিরাগত বর্গিরা অশান্তি তৈরির জন্য বাংলায় আসছেন। তাঁরা কীভাবে সমস্যা তৈরি করতে শুরু করেছে তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে রইল এই ঘটনা।"
আরও পড়ুন, নেতাজি জয়ন্তীর ‘সরকারি’ অনুষ্ঠানে কার্ড বিলি বিজেপির, পরিকল্পিত চক্রান্ত?
বিজেপির পক্ষ থেকে অবশ্য স্বীকার করে নেওয়ায় হয়েছে যে ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চে এই স্লোগান 'অনুপযুক্ত' ছিল। আর এখন বিজেপির এই স্লোগানকে তৃণমূল হাতিয়ার করছে। তবে পদ্ম শিবিরের তরফে এও জানান হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্যা রয়েছে 'জয় শ্রী রাম' নিয়ে। তৃণমূল যতই যা বলুক। এদিকে তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, বিজেপির উত্থানের আগে "ধর্মীয় স্লোগান" বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের অংশ ছিল না।
সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, "আপনি যদি ১৯৫২ সাল থেকে আজ অবধি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যান তবে এ জাতীয় ধর্মীয় স্লোগান কোনও পক্ষই কখনও উত্থাপন করেনি। তারা উত্তর ভারতের সংস্কৃতি এখানে নিয়ে আসছে। এই স্লোগানটি বাংলার রাজনীতিতে বহিরাগত।" তবে তৃণমূলের দলীয় সূত্র মতে নির্বাচনের আগে বিজেপির এসব 'ফাঁদে' তাঁরা পড়বেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মমতা শিবিরের এক নেতা বলেন, "তৃণমূলকে হিন্দু বিরোধী করার চেষ্টা করছে বিজেপি। তাই এসব কৌশল নিচ্ছে। এটা একরকমের ফাঁদ। বাংলার নিজস্ব স্লোগান রয়েছে। জয় দুর্গা, জয় মা কালী। প্রতিটি সমাবেশে আমাদের নেতারা জয় বাংলা বলে থাকেন। তা বাংলার গর্বের। এর মধ্যে জয় শ্রী রাম আসবেই বা কেন?"
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন