রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এবার অল-আউট চাপ বাড়াতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। জগদীপ ধনকড়কে বাংলায় রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করার পর থেকেই রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর অনবরত সংঘাত লেগেই রয়েছে। এবার যেন একটা হেস্তনেস্ত করতে চাইছে তৃণমূল। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যপাল প্রসঙ্গে ব্যাপক ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভায় প্রস্তাব আনতে পারে তৃণমূল।
আসন্ন বাজেট অধিবেশনে লোকসভা ও রাজ্যসভায় সাংসদদের কী ভূমিকা হবে তা নিয়ে এদিন বৈঠক করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি আগামি ২ ফেব্রুয়ারি দলীয় পদাধিকারী নির্বাবচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'রাজ্যপালের ভূমিকা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, মুখ্যমন্ত্রী হিউম্যান রাইট কমিশন কি করে তৈরি করলেন তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন করছেন। যেন মনে হচ্ছে রাজ্যপালকে নির্দেশ দিয়ে পাঠানো হয়েছে রাজ্য সরকারকে বিরক্ত করার জন্য। রাজ্যপাল মনোনীত কিন্তু আমরা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ক্ষমতা নিয়ে রাজ্যে রয়েছি। এবার সময় এসেছে লোকসভা ও রাজ্যসভায় এ বিষয়ে কথা বলার। রাজ্যপালের যা অবস্থা তাতে তাঁর নিজের চলে যাওয়া উচিত। রাজ্যপাল সংসদীয় গণতন্ত্রকে টুঁটি টিপে মেরে ফেলার কাজ করছেন। দিল্লিতে এই ইস্যু তোলা হবে।' রাজ্যপাল ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেস যে কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে তা স্পষ্ট সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়। একইসঙ্গে রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, 'দলনেত্রী অনুমতি দিলে আগামি বাজেট অধিবেশনে লোকসভা ও রাজ্যসভায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা হবে।'
রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীর বিবাদ এখন শুধু বাক্যবাণেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ২৬ জানুয়ারিও বাদ যায়নি সংঘাতের আবহের। দুজন একই জায়গায় হাজির থাকলে ভাবভঙ্গী, পরিস্থিতি বুঝিয়ে দেয় পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। তৃণমূলের বড় অভিযোগ, রাজভবনই এখন বিজেপির দলীয় কার্যালয়। অন্যদিকে বিজেপি রাজ্যপালের হয়ে গলা ফাটাতে থাকে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও রাজ্যপালের নামে নালিশ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালকে চাপে রাখতে এবার বাজেট অধিবেশনকেই বেছে নিতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনগত দিক খুঁটিয়ে দেখছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
শুধু রাজ্যপাল ইস্যু নয়, ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশনে তৃণমূল সাংসদরা কী ভূমিকা নেবেন সেই দিক নির্দেশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদীপের বক্তব্য, 'প্রতি পদক্ষেপে কেন্দ্রীয় সরকার বাধা দিচ্ছে, ফেডারেল স্ট্রাকচার নষ্ট করে দিচ্ছে সে বিষয়েও পদক্ষেপ করবে তৃণমূল। প্রতিবাদ করা হবে রাজ্য থেকে আইএএস ও আইপিএসদের নিয়ে যাওয়া নিয়েও। কোভিডের ক্ষেত্রেও আমাদের রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা করা হয়েছে। এমন নানান বিষয় লোকসভার অধিবেশনে তুলে ধরা হবে। সূত্রের খবর, ফের সংগঠনের হাল ধরবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। পাশাপাশি রাণাঘাট পুনরুদ্ধার করার কথাও ঘোষণা করেছেন তৃণমূলনেত্রী। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামি ২ ফেব্রুয়ারি দলের নির্বাচনে সব সাংসদ এর থাকতে বলা হয়েছে। ওই দিন রাজ্যসভায় থাকবেন সুখেন্দু শেখর রায় ও জহর সরকার। লোকসভায় থাকবেন সৌগত রায়। বাকিরা কলকাতায় থাকবেন।