Advertisment

তৃণমূলের হাত ধরে দক্ষিণপন্থী সভার ভোলবদল, সৌজন্যে পিকে

হলের ভিতরের আয়োজনে দেখে বারবার মনে হয়েছে বড় কোনও কর্পোরেট সংস্থার 'ইভেন্ট' চলছে। আর স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে সভার আয়োজনে আর নেতা নির্ভর নয় তৃণমূল কংগ্রেস।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
prashant kishor

তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাজি ইন্ডোরের সভায় প্রশান্ত কিশোর। ছবি-পার্থ পাল

এক অন্য রাজনৈতিক সভা দেখল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম। আয়োজনের তারতম্যে আগের সব সভাকেই নানা দিক থেকে টেক্কা দিয়ে গেল সোমবারের 'বাংলার গর্ব মমতা'-র অনুষ্ঠান।

Advertisment

সোমবার মঞ্চে সব মিলিয়ে তিনটি চেয়ার ছিল। বসে ছিলেন দলের তিন সর্বোচ্চ পদাধিকারী। একজন দলের সভানেত্রী, অন্যজন সাধারণ সম্পাদক এবং অপরজন মহাসচিব। মঞ্চে নেতা-নেত্রীদের দাপাদাপিও এদিন উধাও। দলের 'যুবরাজ' ৪-৫ মিনিট ভাষণ দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন মঞ্চে ওঠার সিঁড়িতে। আর ময়দান কাঁপানো তাবড় নেতৃত্বকে দেখা গেল সাধারণ কর্মীদের মতই দর্শকাসনে বসে দলনেত্রীর বক্তব্য শুনতে।

শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়, বাংলার দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে এমন ছিমছাম আয়োজন সচরাচর দেখা যায় না। ফলে এভাবেও যে রাজনৈতিক সভা সম্পন্ন করা যায় তা বোধধয় সোমবারের আগে ভাবেননি তৃণমূলের ছোট-বড় নেতারাও। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সভা আয়োজনের জন্য নেতা বা পুলিশের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে গেল এবার। এদিনের পর দলনেত্রীর কাছে পিকের গুরুত্বও সম্ভবত অনেকটা বাড়ল।

আরও পড়ুন: ‘গজুভাই আপনি গজা খেয়ে বাংলা চালাবেন?’ মোদী-শাহকে আক্রমণ মমতার

সোমবার 'বাংলার গর্ব মমতা' কর্মসূচির সূচনা হয় নেতাজি ইন্ডোরে। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের সেই ঠেলা-ঠেলি, হুড়োহুড়িও নেই। চিৎকার-চেঁচামেচিও উধাও। সারিবদ্ধভাবেই হলে প্রবেশ করলেন সবাই। প্রত্যেক আমন্ত্রণপত্রে ছিল বার কোড। সেই অনুযায়ী ছিল বসার ব্যবস্থা। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে মঞ্চের চালচিত্রের রঙ ছিল গেরুয়া ঘেঁষা।

prashant kishor tmc সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূল কংগ্রেসের সভা। ছবি-পার্থ পাল

এদিন মূল মঞ্চের বড় স্ক্রিন ছাড়াও ইন্ডোরে আরও চারটে স্ক্রিন ছিল। অত্যাধুনিক মানের ক্যামেরাও ছিল। আলাদাভাবে চোখ টেনেছে নীল রঙের কার্পেট এবং মঞ্চের সামনে সাদা মোড়কের ঝাঁ-চকচকে চেয়ার। চমৎকার সাউন্ড সিস্টেম। আইপ্যাক ও দলের স্বেচ্ছাসেবকদের কালো রঙের টি-শার্ট। আইপ্যাকের কর্মী ছিল ৩০০-এর ওপর। সভার আগে নানা রাজনৈতিক কাহিনীর ছবি ভেসে এসেছে স্ক্রিনে। হলের ভিতরের আয়োজনে দেখে বারবার মনে হয়েছে বড় কোনও কর্পোরেট সংস্থার 'ইভেন্ট' চলছে। আর স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে সভার আয়োজনে আর নেতা নির্ভর নয় তৃণমূল কংগ্রেস। বরং নেতারা এসেছেন, বক্তব্য শুনেছেন এবং চলে গিয়েছেন।

পিকের এদিনের আয়োজনে বিশেষ নজর কেড়েছে ৫২/২৮ আয়তনের মঞ্চে মাত্র তিনটে চেয়ারের উপস্থিতি। মাঝের চেয়ারে দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রীর ডানদিকে সুব্রত বক্সী এবং বাম দিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মিনিট পাঁচেকের জন্য বক্তব্য রেখেছেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রত বক্সী কোনওরকম দু-চার লাইন বক্তব্য রেখেছেন। প্রশান্ত কিশোর কয়েক দিনের না-কাটা কাঁচা-পাকা দাড়ি নিয়ে মঞ্চের সামনে চেয়ারে ঠায় বসে থেকেছেন অন্যান্যদের সঙ্গে।

আরও পড়ুন: তৃণমূলের নয়া চমক! ‘বাংলার গর্ব মমতা’ আদতে কী?

তবে, বক্তব্য রাখা তো দূরের কথা মঞ্চে অন্য কোনও নেতার টিকি পর্যন্ত দেখা যায়নি। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চল্লিশ মিনিট বক্তব্য রেখে দলের নেতা-কর্মীদের ভোকাল টনিক দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সভায় বক্তব্য রেখেই তিনি চলে গিয়েছেন উত্তরবঙ্গে। মনে করা হচ্ছে, সভার আয়োজনের এই পদ্ধতির মাধ্যমে দলের নেতা-নেত্রীদের আদপে বার্তা দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য সভা শেষের পর নেতাজি ইন্ডোরের সামনের রাস্তায় যথারীতি যানজটে নাকাল হতে হয়েছে। সেই রেশ ছিল বিধানসভাতেও। জেলা-শহরের নেতাদের শয়ে শয়ে গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেছে। সেই জট ছাড়াতেই যেন ট্রাফিক পুলিশের দফরফা।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Mamata Banerjee All India Trinamool Congress
Advertisment