যে কোনও দিন খুন হয়ে যেতে পারেন, সেই ভয়েই নিজেরই মূর্তি গড়ে ফেললেন তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর। একটি নয়, গড়া হয়েছে তিনটি মূর্তি। আপাতত সেগুলি বিধায়কের দক্ষিণ ২৪ পরগনার বগুলাখালির বাড়িতেই শোভা পাচ্ছে!
তিনটি মূর্তির মধ্যে একটি আবক্ষ আর দুটি পূর্ণাবয়ব। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে বেশ কিছুক্ষণ নিজের মূর্তি দেখভালও করেন গোসাবার বিধায়ক।
মূর্তি গড়া প্রসঙ্গে ৭১ বছরের বিধায়ক জানালেন, 'আমরা যাঁরা রাজনীতি করি, তাঁদের শত্রুর অভাব নেই। কখন খুন হয়ে যাব, কেউ জানে না। যেকোনও দিন আমার মৃত্যু হতে পারে। আমার অ-বর্তমানে আত্মীয়রা আমার মূর্তি নাও বসাতে পারেন। তাই আমি নিজেই তা বানিয়ে রেখে যাচ্ছি।'
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন অঞ্চলের গোসাবা রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাপ্রবণ। অতীতে দুই বাম শরিক সিপিএম-আরএসপির কর্মী-সমর্থকদের মারামারিতে প্রায়ই সংবাদ শিরোনামে উঠে আসত এই জনপদ। রাজনৈতিক হিংসায় গোসাবায় মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধির পর তাদের কর্মীদের সঙ্গেও বামেদের গন্ডগোল হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত দিনে দু'বার বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সে যাত্রায় অবশ্য প্রাণে বেঁচে যান শাসক দলের বিধায়ক। এরপরই গত বছর থেকে নস্করের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাঁর সুরক্ষায় এখন মোতায়েন থাকেন ১১ পুলিশকর্মী।
জয়ন্ত নস্করের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক পরিবারে। তাঁর দাদা চিত্তরঞ্জন নস্কর ছিলেন কংগ্রেস নেতা। জয়ন্তবাবু ১৮৮৭ সাল থেকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে, কংগ্রেসের টিকিটে লড়াই করে ১৮৮৭-তে বামেদের কাছে পরাস্ত হতে হয় তাঁকে। নস্কর তৃণমূলে যোগ দিলেও ২০১১ পর্যন্ত সেই ধারাই বজায় ছিল। ২০১৬ সালে অবশ্য জোড়া-ফুল প্রার্থী হিসাবে গোসাবায় জয়যুক্ত হন তিনি। যদিও রাজ্যে তাঁর দল ক্ষমতায় থাকলেও বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের জীবনহানির আশঙ্কা দূর হয়নি। আর সেজন্যই আগেভাগেই নিজের মূর্তি গড়ে রাখলেন গোসাবার বিধায়ক!
তবে এই মূর্তি বানাতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি জয়ন্ত নস্করকে। শিল্পী খুঁজতে বেশ কয়েকবার কুমোরটুলিতে গিয়েছিলেন এই বিধায়ক। এরপর, গত দু'মাসে সাত বার শিল্পীর কাছে গিয়েছেন তিনি। প্রথমে মাটির মূর্তি তৈরি করা হয়। তারপর তৈরি হয় জয়ন্ত নস্করের ফাইবারের মূর্তি।
মূর্তি বানালেও বেঁচে থাকাকালীন এই মূর্তি প্রকাশ্যে স্থাপন করবেন না গোসাবার বিধায়ক। পাঁচ সন্তানের পিতা জয়ন্ত নস্করের কথায়, 'আমার মৃত্যুর আগে এই মূর্তিগুলি কোথাও বসানো হবে না। এই নিয়ে আমি দলীয় কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলিনি। তবে, আমার মৃত্যুর পর আত্মীয় ও দলের কর্মীরা চাইলে এই মূর্তিগুলি স্থাপণ করতে পারবেন।'
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন