লুচি-আলুর দম, খিচুড়ি-বেগুন ভাজার পর এবার পরোটা-ডাল-ফিশ কাটলেট! রবিবার ছুটির দিনে সকাল থেকে রাত, বঙ্গ রাজনীতিতে সব লাইমলাইট কেড়ে নিলেন একজনই। তিনি সব্যসাচী দত্ত। নাগাড়ে 'দলের জন্য অস্বস্তিকর' মন্তব্য এবং সব শেষে রাজ্যের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পরই সব্যসাচীর 'ডানা ছাঁটতে' মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচীকে নিয়ে ‘ফয়সালা’ করতে বিধাননগরের অন্যান্য তৃণমূল কাউন্সিলরদের নিয়ে রবিবার বৈঠকে বসেছিলেন ‘ক্ষুব্ধ’ ফিরহাদ হাকিম। সেই বৈঠকেই সব্যসাচীর ডানা ছেঁটে বিধাননগর পুরনিগমের কাজ চালিয়ে যাওয়ার ভার দেওয়া হয় ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়কে। তবে এ ঘটনার পরও সব্যসাচীর কোনও হেলদোল নেই। যাঁর সঙ্গে লুচি-আলুর দম খাওয়া ঘিরে দলে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন সব্যসাচী, সেই মুকুল রায়ের সঙ্গে এদিন রাতে ফের পাত পেড়ে পরোটা-ডাল-ফিশ কাটলেট খেলেন রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক। রাতবিরেতে সব্যসাচী-মুকুলের এহেন সাক্ষাৎ ঘিরে আবারও জোর জল্পনা শুরু হয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। তাহলে কি সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদান এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা?
ঠিক কী ঘটেছে কাল রাতে?
রবিবার রাতে সব্যসাচীর খাস তালুক তথা সল্টলেকের বিএফ ব্লকের বিধাননগর সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের পুলে হঠাৎই হাজির হন একদা তৃণমূলের ‘২ নম্বর’ তথা বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়। এখানেই মুকুল রায়ের সঙ্গে সব্যসাচী দত্তের বৈঠক হয়। তবে রাতের এই বৈঠকে কোনও আড়াল রাখেননি উভয়েই। বরং বৈঠক শেষে একসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুকুল-সব্যসাচী। জানতে চাওয়া হয়, বিজেপিতে কি যোগ দিচ্ছেন সব্যসাচী? এর উত্তরে মুকুল রায়ের অবশ্য জবাব, ‘‘সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে কোনও কথা হয়নি’’। এরপরই মুকুলের সংযোজন, ‘‘ওকে উপদেশ দেওয়া দাদা হিসেবে আমার কর্তব্য। একটা তো রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ওর কী করণীয়, কী কাজ করা উচিত, সে ব্যাপারে বিজেপি নেতা হিসেবে নয়, সব্যসাচীর দাদা হিসেবে ওকে উপদেশ দিলাম’’।
আরও পড়ুন: মুকুলদার সঙ্গে যাওয়ার হলে চলে যা, ‘উদ্ধত’ সব্যসাচীকে বার্তা ববির
অন্যদিকে, সব্যসাচীর পাশে বসে এদিন চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেন মুকুল রায়। বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘বিগত লোকসভা নির্বাচনে সব্যসাচীর ভূমিকা আমাদের পক্ষে ভাল ছিল’’। তাহলে কি সব্যসাচী বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন? জবাবে বিধাননগরের মেয়র বলেন, ‘‘আমার বিধানসভায় তৃণমূল জিতেছে, তাতে আমি গর্বিত। কখনও পিছন থেকে ছুরি মারি না। বিধাননগর বিধানসভায় কিন্তু তৃণমূল হেরেছে। তার মানে আমার জেতানোর এবং হারানোর ক্ষমতা আছে’’। প্রসঙ্গত, রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের সঙ্গে বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুর দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে রাজারহাট-নিউটাউন বিধানসভায় জিতেছে তৃণমূল। কিন্তু, বিধাননগর বিধানসভায় খারাপ ফল হয়েছে শাসক শিবিরের। মুকুল রায়ের এহেন দাবি এবং তার প্রেক্ষিতে সব্যসাচীর এহেন মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘স্বামীর কথায় নুসরত কি বিজেপিতে যাচ্ছেন?’
প্রসঙ্গত, লুচি-আলুরদম পর্ব থেকেই তৃণমূল-সব্যসাচী সম্পর্কে ফাটলের সূত্রপাত। সল্টলেকে সব্যসাচী দত্তের বাড়িতে বিনা নিমন্ত্রণে যান একদা তৃণমূলের ‘অঘোষিত দু’নম্বর’ তথা বর্তমানে বিজেপি নেতা মুকুল রায়। লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ শিবিরের অন্যতম নেতার সব্যসাচীর বাড়িতে পাত পেড়ে লুচি-আলুর দাম খাওয়া নিয়ে বাংলার রাজনীতিতে বিস্তর জল্পনা শুরু হয়। এরপরই সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এ ঘটনার পরও দোলের সময় সল্টলেকের অবাঙালি সমাজের উৎসবে অংশ নিয়ে ‘ভারতমাতা কি জয়’ বলে এবং ‘মেয়র থাকি বা না থাকি’ মন্তব্য করে জল্পনায় জল-বাতাস দেন সব্যসাচী দত্ত। সম্প্রতি একটি পারিবারিক পুজোয় মুকুল রায়ের সঙ্গে বসেই পাত পেড়ে সব্যসাচীকে খিচুড়ি-বেগুন ভাজা খেতে দেখা গিয়েছে। এমনকী, এনআরএস ইস্যুতেও সব্যসাচীর মন্তব্য অস্বস্তিতে বাড়িয়েছে তৃণমূলের। এর পাশাপাশি, শুক্রবারই সল্টলেকে বিদ্যুৎ ভবনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে দলের নেতা তথা রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে নাম না করে কটাক্ষ করেন সব্যসাচী।