যত দিন যাচ্ছে, ততই যেন গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝুঁকছেন তৃণমূলের সব্যসাচী দত্ত। ক’দিন আগেই গণেশ পুজোয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ‘খোশমেজাজে’ সময় কাটাতে দেখা গিয়েছে রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ককে। এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত যজ্ঞের অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র। যে ঘটনায় সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা আরও একবার উস্কে দিল বলে মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। যদিও এ বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে জবাব দিয়েছেন সব্যসাচী।
সল্টলেকের সিএফ ব্লকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৬৯ তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে এদিন অংশ নেন তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে সব্যসাচী বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে ওই অনুষ্ঠান হচ্ছিল, তাই গিয়েছিলাম। উনি কি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী? তৃণমূলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। প্রধানমন্ত্রী কি দলের ঊর্ধ্বে? দলের লোক প্রশ্ন করতে চাইলে জবাব দেব’’। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এসব করে আসলে পরোক্ষে নিজের দল তৃণমূলকেই বার্তা দিচ্ছেন সব্যসাচী।
আরও পড়ুন: ‘রাজীব কুমারের পরিণতির জন্য মমতাই দায়ী’
তবে সব্যসাচীর এহেন কার্যকলাপকে ‘গুরুত্ব’ দিতে নারাজ উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এ প্রসঙ্গে তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, ‘‘ওঁর কথা বলে কোনও লাভ আছে! দলের কাছে ওঁদের (সব্যসাচী) কোনও মূল্য নেই। আমরা এসব নিয়ে ভাবিনা। আমরা ওঁর নাম উচ্চারণ করি না’’।
আরও পড়ুন: জন্মদিনে মোদীকে শুভেচ্ছা মমতার
উল্লেখ্য, ক’দিন আগেই সল্টলেকে সব্যসাচীর গণেশ পুজোয় হাজির হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায় থেকে শুরু করে অরবিন্দ মেনন, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের মতো বিজেপির শীর্ষ নেতারা। এমনকি, গণেশ পুজোর অনুষ্ঠানে মঞ্চে সব্যসাচীর সঙ্গে গান গাইতেও দেখা গিয়েছিল কৈলাশকে। সেবারও তাঁর বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে কৌশলে সব্যসাচী বলেছিলেন, এটা সামাজিক অনুষ্ঠান, যে কেউ আসতে পারেন। সব্যসাচীর গণেশ পুজোর মণ্ডপেও এবার গেরুয়া ছোঁয়া ছিল। পদ্মফুলের আদলে তৈরি করা হয়েছিল প্যান্ডেল। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এতদিন শুধুমাত্র মুকুল রায়ের সঙ্গেই বারবার দেখা গিয়েছে সব্যসাচীকে। কখনও মুকুলের সঙ্গে পাত পেড়ে লুচি-আলুর দম খেয়েছেন সব্যসাচী, তো কখনও পরোটা-ডাল খেয়েছেন। আবার কখনও সব্যসাচীকে ‘ভাই’য়ের মতো আগলেছেন মুকুল। কিন্তু মুকুলের পাশাপাশি দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিং কিংবা অরবিন্দ মেননের মতো বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে যে ভঙ্গিতে গণেশ পুজোয় সব্যসাচীকে দেখল বঙ্গ রাজনীতি, তাতে তাঁর বিজেপি যোগের রাস্তা ক্রমশ তরান্বিত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।