তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরী কে হবেন, সেই প্রশ্নের জবাব রয়েছে মানুষের কাছেই। শনিবার ডায়মন্ড হারবারে এক সভায় দীর্ঘ বক্তব্যের মধ্যে সেই সম্ভাবনাকে আরও উসকে দিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাাশাপাশি সেই সভায় সুর অনেকটা চড়িয়ে তোপ দাগলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। যদিও দিলীপ ঘোষের জবাব, "যুবরাজ যুবরাজই থাকবে। মহারাজ হতে পারবে না।"
এতদিন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের মুখে শোনা যেত নেত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকার কথা। কোথাও বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক, সদ্য নির্বাচিত মেয়র ফিরহাদ হাকিম, বা অরূপ বিশ্বাস সাধারণত এভাবেই কথা বলেন। কখনও ভুলেও কেউ বলেন নি, নেত্রীর জায়গায় তাঁরা আসতে পারেন। অথচ শনিবার ডায়মন্ড হারবারের সভায় এমন ইঙ্গিতই যেন দিলেন সেখানকার সাংসদ এবং দলনেত্রীর ভাইপো। এই নিয়েই সোরগোল বেঁধেছে রাজনৈতিক মহলে।
ঠিক কী বলেছেন অভিষেক? "যত ধমকানো চমকানোর আছে তোরা কর। তোরা যে ভাষায় বুঝিস, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত অত উদার নই। আমরা কেউ হতেও পারব না। তাঁর নখের যোগ্য হতে পারব না। আমি যদি তাঁর জায়গায় থাকতাম, কী পরিণতি হত বুঝতিস। আমাদের নেত্রী শিখিয়েছেন শান্তির পথ অবলম্বন করে রাজনীতি করতে হবে। ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাও রাজনীতি করি না। সাজিয়ে দাও-গুছিয়ে দাও রাজনীতি করি।"
আরও পড়ুন: রথের চাকা খুলে নেওয়ার হুঁশিয়ারি অভিষেকের; বুকের ওপর রথ চালাব, পাল্টা বললেন দিলীপ
রাজনৈতিক বক্তব্যে হুমকি দেওয়া এখন এতটাই গা সওয়া হয়ে গেছে যে তা আর চর্চার বিষয়ও নয়। কিন্তু এত দিন অভিষেকও নেত্রীর নির্দেশের কথাই বলে আসছিলেন। সে জায়গায় শনিবার বললেন, "তাঁর জায়গায় যদি থাকতাম"। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরী হিসেবে আদৌ যদি কারও কথা ভাবা হয়ে থাকে, তাঁর পরিচিতি এখন আর গোপন নেই বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।
এদিন লাগাতার তীব্র ভাষায় বিজেপিকে আক্রমন করেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। সভাপতি দিলীপ ঘোষকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "ক্ষমতা থাকলে নিজে লড়াই কর ডায়মন্ড হারবার থেকে। তা না হলে যে পিতামহদের পাঞ্জাবী ধরে ঝুলে আছিস, দিল্লি থেকে তাদেরকে নিয়ে এসে এখানে দাঁড় করা। তাদের গোহারান হারিয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত করে একটাকে রাজধানী ৪.৫০ এ আর একটাকে আহমেদাবাদ এক্সপ্রেসে ১০.৫৫ তে তুলে গ্যারেজ করে পাঠিয়ে দেব।" একইসঙ্গে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, "আমাদের মধ্যে যে হারব সে চিরতরে রাজনীতি ছেড়ে দেব।"
শনিবার বিবিরহাটের জনসভায় মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে যুবরাজ এও বলতে ছাড়েননি, "আরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কী হারাবি? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলা ছাড়া করতে গিয়ে মোদী আগামী দিন দিল্লি ছাড়া হবে।" হুমকি, হুঁশিয়ারি ভরা ভাষণে তুই-তোকারি ছাড়া কিছু শোনা যায় নি বিশেষ।
অভিষেকের বক্তব্যের জবাবে দিলীপ ঘোষ বলেন, "ওখানে পৌঁছতে পারবে না কোনদিন। যুবরাজ যুবরাজই থাকবে, মহারাজ হতে পারবে না। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম। ওকে হারাতে আমাকে যেতে হবে না। ওকে হারানোর জন্য অনেক লোক আছেন। হতাশা থেকে এসব তুই-তোকারি করছে। এভাবে বলার লিজ দিয়েছে জ্যোতিপ্রিয়। আমার নাম করে। এটা খুব চলছে।" দিলীপবাবুর কটাক্ষ, "দিল্লি পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে যাতে এখানকার জায়গাটা পায়। সেই সম্ভাবনা নেই।"