নতুন সাংগঠনিক পরিকাঠামো অনুযায়ী তৃণমূল কংগ্রেসে জেলা পর্যবেক্ষক পদের বিলুপ্তি ঘটেছে। একইসঙ্গে স্থানীয় নেতৃত্বের হাতেই দেওয়া হয়েছে জেলা সংগঠনের ক্ষমতাভার। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের যেসব পর্যবেক্ষকরা নানা জেলার দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম পরিবহণমন্ত্রী তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। অন্যদের তুলনায় তার অধীনে জেলার সংখ্যাও ছিল বেশি। ফলে বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্তের পর অনেকটাই দায়িত্ব কমে গেল ‘নন্দীগ্রামের নায়কে’র।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে দলের চূড়ান্ত ভরাডুবি হয়েছিল। বিজেপির কাছে সব আসনেই পরাজিত হয়েছিল ঘাসফুল শিবির। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে ডাক পড়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর। তখন সেখানে বন্ধ দলীয় কার্যালয় খোলা থেকে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করা, সবেতেই নেতৃত্ব দিয়েছেন শুভেন্দু। দলের একাংশ মনে করে এভাবেই সেখানকার নেতা-কর্মীদের মনোবল বাড়াতে সচেষ্ট ছিলেন তিনি। কিন্তু তৃণমূলের ঘোষিত নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ শুভেন্দু অনুগামীরা। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠমহলের বক্তব্য, "দাদাকে দল মর্যাদা দিল না। দায়িত্বও দিল না। সামনেই ২০২১ বিধানসভার নির্বাচন। এতে দলের ক্ষতি হবে।" ওই মহলের প্রশ্ন, তাঁকে ৭ জনের স্টিয়ারিং কমিটিতে রাখলেও পৃথক কোনও ক্ষমতা কেন দেওয়া হল না? বাকি সাংগঠনিক যে সব পদ দিয়েছে তাতে একজন সদস্য ছাড়া কিছু নয় বলেই তাঁদের অভিমত।
একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য যুব সভাপতি ছিলেন শুভেন্দু। তিনি সভাপতি থাকাকালীন তৃণমূল যুবা নামে পৃথক সংগঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই যুবার শীর্ষে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর একটা সময়ে দুই যুব সংগঠনকে মিশিয়ে দিয়ে একটি সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব বর্তায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। শুভেন্দুকে সাংসদ করে দিল্লি পাঠানো হয়েছিল। পরে আবার বিধায়ক করে রাজ্যের মন্ত্রীও করা হয়।
রাজনীতির কারবারিরা মনে করছে, দলে ভারসাম্যের কথা বলা হলেও কার্যত শুভেন্দুকে ক্রমে কোনঠাসা করে দেওয়া হয়েছে। দলের সাংগঠনিক পরিবর্তনে অনেকেই ভেবেছিলেন কঠিন লড়াইয়ের আগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে নন্দীগ্রামের বিধায়ককে। অথচ দেখা গেল ৭ জনের স্টিয়ারিং কমিটিতে তাঁকে রাখা হলেও পৃথক ভাবে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বাকি পদগুলিতেও একজন সদস্য ছাড়া আলাদা কোনও ক্ষমতা নেই। অর্থাৎ সাংগঠনিক ভাবে শুভেন্দুর অস্তিত্ব জাহির করার তেমন কোনও পথ খোলা রাখা হল না। বরং মেদিনীপুরের রাজনীতিতে অধিকারী পরিবারের চরম বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বলে পরিচিত অখিল গিরির ছেলে সুপ্রকাশ গিরিকে রাজ্য যুবর সহসভাপতি করে দলে অধিকারীদের দখল কিছুটা খর্বই করা হল বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকী 'শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ' জেলার যুব সভাপতিকেও সরানো হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন