২০২১ বিধনসভা ভোটের কড়া নাড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি আমফান ঝড়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক মন্ত্রী দুর্নীতি সহ নানা ইস্যু নিয়ে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন। অনেকে আবার রীতিমত তোপ দেগেছেন দলেরই অন্যান্য মন্ত্রী বা নেতার বিরুদ্ধে। এমতাবস্থায় যখন মনে করা হচ্ছিল, এইসব ‘বিদ্রোহীরা’ শাস্তি পাবেন, ঠিক তখনই ঘটল উল্টো ঘটনা। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলের পর দেখা গেল তাঁরা সবাই রাজ্য কমিটি বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। এরপরই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি যাঁরা প্রতিবাদী তাঁদের দল গুরুত্ব দিতে বাধ্য হল? নাকি কিছু ক্ষেত্রে ওপর মহলকে জানিয়েই এক মন্ত্রী আরেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন?
সুব্রত মুখোপাধ্যায়
তৃণমূল কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিধায়করা স্থানীয় ভিত্তিতে সাংবাদিক বৈঠক করবেন। সেই মতো বালিগঞ্জের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আমফান পরিস্থিতিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে বোমা ফাটিয়েছিলেন। সুব্রতবাবু অভিযোগ করেছিলেন, "আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত সাগর পরিদর্শনে যাননি পাশে থাকা রাজ্যের এক মন্ত্রী।" তাঁর সেই অভিযোগ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল দলে। এক মন্ত্রী সরাসরি বর্ষীয়াণ আরেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগও করছেন। এরপরও সুব্রত মুখোপাধ্যায় রয়েছেন ২১ জনের সমন্বয় কমিটিতে। এছাড়া তিনি রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সহসভাপতি হয়েছেন।
সাধন পান্ডে
আমফান ঝড়ে কলকাতা লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমকে কাঠগড়ায় তুলিছলেন আরেক বর্ষীয়াণ মন্ত্রী সাধন পান্ডে। প্রকাশ্যে কঠোর সমালোচনা করেছিলেন মমতা ঘনিষ্ট ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে। তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। বিধায়কদের সঙ্গে কথা না বলে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমফান ঝড়ে বিদ্ধস্ত কলকাতাকে স্বাভাবিক করতে দেরি করছেন ববি, এই ছিল উত্তর কলকাতার বিধায়কের মূল বক্তব্য।প্রকাশ্য়ে এই বিবৃতি দেওয়ায় দল শোকজও করে সাধন পান্ডেকে। এরপর দলের বিধায়ক পরেশ পাল আবার প্রেস কনফারেন্স করে তুলোধোনা করেন সাধন পান্ডেকে। এবার সেই সাধন পান্ডেই স্থান পেয়েছেন দলের ২১ জনের রাজ্য় সমন্বয় কমিটিতে।
আরও পড়ুন- দাদার গুরুত্ব কমল দিদির দলে, ক্ষুব্ধ অধিকারী ব্রিগেড
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়
মন্ত্রী তথা হাওড়ার সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির ইস্যুতে প্রকাশ্যে সরব হয়েছিলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ইস্যু সেই আমফান। হাওড়া জেলা সভাপতি রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় আমফানে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তিন তৃণমূল নেতাকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছিলেন। তাতেই গোঁসা হয়েছিল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূলের এই তরুণ-তুর্কি নেতা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিলেন, আশেপাশে থাকা রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? তাঁর লক্ষ্য ছিল তৎকালীন জেলা সভাপতি অরূপ রায়। বৃহস্পতিবার দেখা গেল একদিকে রাজীব স্থান পেলেন রাজ্য কমিটিতে, আবার অরূপ রায়কেও সরানো হল হাওড়ার (শহর) জেলা সভাপতির পদ থেকে। অরূপের স্থলাভিষিক্ত হলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা বর্তমানে মন্ত্রী লক্ষীরতন শুক্লা।
মহুয়া মৈত্র
কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র সরব হয়েছিলেন গ্রামপঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ে। মহুয়া মৈত্র তাঁর ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, “এখনও বহু পঞ্চায়েত পুরনো টাকা খরচ করতে পারেনি। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে অন্তত ৬০ শতাংশ টাকা খরচ করার নিয়ম। বহু পঞ্চায়েতে বেশীর ভাগ রাস্তাই এখনও কাঁচা।” পঞ্চায়েতে ৫ লক্ষ টাকার উপরের কাজে যেহেতু ই-টেন্ডার ডাকার নিয়ম তা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল মহুয়ার। পঞ্চায়েতগুলিতে টাকা পড়ে থাকলেও কাজ হয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। মহুয়ার সেই অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বে শোরগোল পড়েছিল। অত:পর দেখা গেল প্রতিবাদী মহুয়াকেই নদীয়া জেলার সভাপতি করেছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন- আজ বাংলার বড় খবর: বাংলায় লকডাউনে উড়ান বন্ধ।। ভাটপাড়ায় ফের গুলি, উত্তেজনা।। প্রয়াত অমলা শঙ্কর
কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী
মালদার ইংরেজ বাজারের তিন বারের বিধায়ক। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী স্থানীয় তৃণমূল গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান ও এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের বিরুদ্ধে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন। কী ছিল সেই অভিযোগ? গরিব মানুষকে জিরো ব্যালেন্স ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ধান কেনা-বেচা থেকে নানা প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তৃণমূল গ্রামপঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করছেন তৃণমূল নেতা। তাজ্জব বনেছিলেন রাজনৈতিক মহল। এরপর তিনিও স্থান পেয়েছেন রাজ্য কমিটিতে। তাঁকে রাজ্য কমিটির অন্যতম সম্পাদক করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন