Advertisment

পঞ্চায়েত ভোটঃ তৃণমূলের নয়া ফরমান, টোল বুথ, বালির খনি বা অন্যান্য সুবিধা নেওয়া যাবে না

অগাস্ট মাসে মেয়াদ শেষ পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের। নির্বাচন হওয়ার কথা ১,৩ এবং ৫ মে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Opposition has alleged TMC violence in run-up to polls. (Express photo by Subham Dutta/file)

লোকসভা নির্বাচনের আগে অন্তর্দ্বন্দ্বের জ্বর সামলাতে চিন্তিত তৃণমূল নেতৃত্ব।

রাভীক ভট্টাচার্য

Advertisment

এবার পঞ্চায়েত ভোট বিষয়ক নয়া ফরমান জারি করল তৃণমূল কংগ্রেস। শাসক দলের এই নয়া নীতি অনুযায়ী আগামী পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেশ করবার সময় কোনওরকম অবৈধ সুবিধা না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

চুক্তি অনুযায়ী এবার কোনও তৃণমুল প্রার্থী অথবা তাঁর পরিবারের অন্য কোনও সদস্য কোনওরকম অন্যায় সুবিধা নেবেন না। চুক্তিপত্র অনুযায়ী, বিজয়ী কোনও প্রার্থী আগামী পাঁচ বছর নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে দলের অনুমতি ছাড়া গীতাঞ্জলি, কৃষি যন্ত্রপাতি সমেত অন্যান্য পরিষেবার সুবিধা নেবেন না। এমনকি তিনি বা তাঁর পরিবার কন্ট্রাক্টরি, বালি খাদ বা টোল ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না, এরকম লিখিত প্রতিশ্রুতিও দিতে হচ্ছে।

publive-image

মনোনয়ন পেশের সময় এই অঙ্গীকার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে হুগলির গোঘাট অঞ্চলের মোট ৩২২ জন তৃণমূল প্রার্থীর জন্যই। তৃণমূল কংগ্রেসের আশা এই চুক্তিপত্রটি দলের ছবি বদলাতে ব্যাপক সাহায্য করবে। উল্লেখ্য, টোল বুথ এবং বালি খাদ জাতীয় ব্যবসায় অবৈধ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বহু তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধেই।

এ ব্যাপারে গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সততা ও স্বচ্ছতার প্রতীক। উনি দিনে ১৮ ঘণ্টারও বেশি কাজ করেন।’’ তৃণমূলনেত্রীর সততা ও স্বচ্ছতার কথা মাথায় রেখেই যে তাঁদের দল এই অঙ্গীকারপত্র লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেকথা জানিয়েছেন মানসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্য ও তাঁর পরিজনরা সুযোগসুবিধা নিচ্ছেন, এমনকি তাঁদের প্রভাব খাটাচ্ছেন, আর এদিকে গ্রামবাসীরা উপেক্ষিত হচ্ছেন, কিছু ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ পেয়েছি।’’ এই অঙ্গীকারপত্রের ফলে পঞ্চায়েত ভোটে নির্বাচিত তৃণমূলের প্রার্থীদের নজরে রাখা হবে, যাতে কোনওরকম বেআইনি কাজে তাঁরা লিপ্ত হতে না পারেন। এমনটাই জানিয়েছেন গোঘাটের বিধায়ক।

অঙ্গীকারপত্রে ব্যক্তিগত তথ্য উল্লেখ করার পাশাপাশি আরও কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছে। দলের সঙ্গে তাঁরা কতদিন ধরে আছেন, সেকথাও উল্লেথ করতে বলা হয়েছে। এর ফলে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে সুবিধা হবে বলেই মনে করছেন মানস মজুমদার।

দলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন গোঘাটের এক পঞ্চায়েত প্রার্থী অনিমা কাটারি। তাঁর মতে, এর ফলে দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আরও স্পষ্ট হবে। গ্রামবাসীরাও যে তাঁদের দলের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন সেকথাও বলেছেন অনিমা। অনিমার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন আরেক পঞ্চায়েত প্রার্থী প্রশান্ত কুমার পাত্র।

আরও পড়ুন : পঞ্চায়েত ভোট: নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আবারও স্থগিতাদেশ বাড়াল হাইকোর্ট

মে মাসে নির্ধারিত পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই গোঘাটসহ হুগলি জেলায় মোট ৩২২ জন প্রার্থীর জন্য কাজের এই নিয়ম লিখিত এবং বাধ্যতামূলক করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এতদিনে দলের ভাবমূর্তি ঠিক করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে তৃণমূল। বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে যে তৃণমুলের পঞ্চায়েত সদস্যরা অবৈধ বালি খাদান এবং টোল বুথ ব্যবসায় জড়িত। দলের মুখ রাখতে এবার রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে পঞ্চায়েতে নিজেদের প্রচার পর্ব সারছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

West-Bengal-Panchayat-Election মনোনয়ন পেশের সময় এই অঙ্গীকার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে হুগলীর গোঘাট অঞ্চলের মোট ৩২২ জন তৃণমূল প্রার্থীর জন্যই

এবছর পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পেশের সময় হওয়া হিংসার দরুণ বিজেপি এবং সিপিএম-সহ সমস্ত বিরোধী দলই শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। তাঁদের দাবি, এরাজ্যের শাসকদল বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশে বাধা দেওয়ার জন্য  হিংসার আশ্রয় নিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মনোনয়নপর্বে অশান্তির ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সরব হন বিদ্বজ্জনরাও।

intellectuals meet পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নপর্বে হিংসা নিয়ে সরব একদা পরিবর্তনপন্থী বিদ্বজ্জনরা। ছবি - শুভম দত্ত, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোট: ২৬ শতাংশ আসনে একলা লড়ছে তৃণমূল, চাঞ্চল্যকর তথ্য কমিশনের

কিছুদিন আগেই রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটপ্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটপ্রক্রিয়ায় প্রথমে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছিল। পরে ভোটপ্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়েছে। সিঙ্গল বেঞ্চের স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সোমবার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সেই মামলা সিঙ্গল বেঞ্চেই ফেরায় ডিভিশন বেঞ্চ।

publive-image

আগামী মাসের ১, ৩ ও ৫ তারিখ রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এদিকে পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই মনোনয়নপত্র দাখিল ঘিরে হিংসার পরিবেশ তৈরি হয় রাজ্যে। শাসসদলের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র পেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে সরব হয় বিরোধীরা।

panchayat vote tmc Mamata Banerjee panchayat election
Advertisment