লোকসভা নির্বাচনের আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, দলে পুরানোদের সম্মান দিতে হবে। দলে তাঁদের জায়গা দিতে হবে। তাঁকে জানালে, তিনি নিজে ব্যবস্থা নেবেন। এরপর নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্রমশ গড়িয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত এ রাজ্যে বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশের স্লোগান থমকে গিয়ে তৃণমূলের ঝুলিতে এসেছে কেবল ২২টি আসন। এরপর জেলা ভিত্তিক বিশ্লেষণে বসে ফের দলের পুরানো সৈনিকদের কথা নেত্রীর গলায়। তাহলে কি অতীতের তৃণমূলকর্মীদের ফিরে না আসাতেই এই খারাপ ফল?
শুক্রবার তৃণমূল ভবনে হুগলি জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠকে ফের দলের পুরানো সৈনিকদের খুঁজে বেড়ালেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সূত্রের খবর, বৈঠকে তিনি জানতে চান, সিঙ্গুরে তখন (আন্দোলন চলাকালীন) যাঁরা দলের সঙ্গে ছিলেন, তাঁরা আজ কোথায়? তিনি বলেন, "আমি তাদের ফেরৎ চাই"। সিঙ্গুরে পরাজয়কে 'লজ্জাজনক' বলে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এদিন উষ্মাপ্রকাশও করেছেন মমতা।
হুগলিতে ফলাফল ধরে রাখা দূরের কথা তৃণমূলের সামগ্রিক ফলই যথেষ্ট খারাপ হয়েছে। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে বিজেপি। আরামবাগ লোকসভায় কান ঘেঁষে জয় হাসিল করেছে তৃণমূল। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে হুগলি জেলার সংগঠন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অঞ্চল সভাপতি, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, দলের সাংসদ, বিধায়ক, জেলা নেতৃত্বের উপিস্থিতিতে বৈঠকে হাজির ছিলেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, এদিন বৈঠকে মমতা জানতে চান, "আমার পুরানো কর্মীরা কোথায়? আমার সঙ্গে যেসব কর্মীরা ১৯৯৮ থেকে রাজনৈতিক লড়াই করেছিলেন, কোনও কিছু পাওয়ার আশা না করেই তাঁরা দল করতেন। সেই সময় সিঙ্গুরে যাঁরা ছিলেন তারা কোথায়? তাঁদের ফিরিয়ে আনতে হবে"।
এবার লোকসভা নির্বাচনের গোড়া থেকে নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত তৃণমূল ভবন অবেহলাতেই পড়েছিল। ওই ভবনে নিয়মিত নেতাদের যাতায়াত প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। সাংগঠনিক বৈঠকও অন্য়ত্র সংগঠিত হচ্ছিল। সেদিক থেকে দেখলে এদিন বৈঠক করে ফের দলীয় কার্য্যালয়কে সচল করলেন মমতা। সূত্রের খবর, এদিন প্রথম জেলা বৈঠকেই রনংদেহী মূর্তি নেন মমতা। লোকসভায় যে সব বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছে সেই এলাকার বিধায়কদের কড়া ধমক দেন দলনেত্রী। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। সূত্রের খবর, তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, 'ইভিএমে কারচুপি ছাড়াও দলের ফল খারাপ হয়েছে। যাঁরা মনে করছেন অন্য কোথাও যাবেন, তাঁদের জন্য দরজা খোলা আছে। কিন্তু দলে থেকে কোনওভাবেই বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না।'
বৈঠক শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আগামী ১৪ জুন উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুরে অঞ্চল সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক হবে। ২১ জুন নদিয়া জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হবে তৃণমূল ভবনে"। তিনি জানান, ২১ জুন চন্দ্রকোনা, ঘাটাল থেকে দক্ষিণবঙ্গে জনসংযোগ যাত্রা শুরু হবে। রাজ্যে জনসংযোগ যাত্রা শেষ হবে ১৮ জুলাই।