তৃণমূল ও এসইউসিআই-র সংঘর্ষে উত্তপ্ত কুলতলি। অভিযোগ, শুক্রবার রাতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অশ্বিনী মান্নার নেতৃত্বে কুলতলির মৈপীঠ এলাকায় এসইউসির কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে ও দোকানে হামালা চালানো হয়। তখন স্থানীয় লোকজন অশ্বিনী মান্নাকে ধরে ফেলে। এরপরই স্থানীয় মানুষ পাল্টা হামলা চালিয়ে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলে অশ্বিনী মান্নাকে, এমনটাই দাবি। ওই ঘটনার পর আজ ফের তৃণমূল বাহিনী বাড়ি ও দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। এসইউসিআই-এর জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সুধাংশু জানাকে খুন করে বাড়িতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের দাবি, অশ্বিনী মান্নাকে গুলি করে খুন করেছে এসইউসি।
আরও পড়ুন- ত্রাণ দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে ক্ষতিগ্রস্তরা
কুলতলির মৈপীঠের গন্ডগোলের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করছেন এসইউসিআই নেতা তরুন নস্কর। তিনি বলেন, "বৃহস্পতিবার আমফানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মৈপীঠ কোস্টাল থানায় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তৃণমূল। তাছাড়া সিপিএমের ৭ জন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের একজন সদস্য ওই পঞ্চায়েত চালাচ্ছে। অনাস্থা উঠে পঞ্চায়েত হাতছাড়া হতে পারে এই আশঙ্কাও ছিল তৃণমূলের। গতকাল সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে দাগী অপরাধী অশ্বিনী মান্নাকে গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। আজ, শনিবার সকালে আমাদের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সুধাংশু মান্নার বাড়িতে হামলা চালায়। তাঁর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারপর মেরে ঘরেই ঝুলিয়ে দেয়। তাঁর স্ত্রী পঞ্চায়েত সদস্য। তাছাড়া আমরা অনেককেই খুঁজে পাচ্ছি না।"
আরও পড়ুন- বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় আসতে কংগ্রেস নেতাকেই ভরসা করছে?
এই ঘটনার প্রতিবাদে এদিন নানা জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে এসইউসি। রবিবার জেলায় প্রতিবাদ দিবস হবে। পরশু রাজ্য স্তরে প্রতিবাদ জানানো হবে। এসইউসির দাবি, "১৯৮৯ সালে এক দিনে তাদের ৯ জন খুন হয়েছিলেন। এই অশ্বিনী মান্নাই ছিল সেদিনের ঘটনার অন্যতম পান্ডা। তখন সে সিপিএমে ছিল, এখন তৃণমূলের সঙ্গে।" তরুনবাবু জানান, মৈপীঠ গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে এসইউসি জয়ী হয়েছিল ১১টি আসনে। সিপিএম জয়ী হয় ৭টি আসনে ও তৃণমূল মাত্র ১টি আসন পায়। তারপর সিপিএমের ৭ জন, এসইউসির ২ জন ও তৃণমূলের এক সদস্য মিলে পঞ্চায়েত গঠন করে। পরে অবশ্য ২ এসইউসি সদস্য তাদের সঙ্গ ছাড়ে।
আরও পড়ুন-প্রধান হোক বা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ত্রাণ দুর্নীতিতে থাকলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে: মমতা
তবে এসইউসির অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বরং তৃণমূলের দাবি, পুরো ঘটনার জন্য় দায়ী এসইউসিআই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, "দোষ ঢাকবার জন্য় তৃণমূলের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। আমাদের দলের অশ্বিনী মান্নাকে গুলি করে খুন করেছে। ভোলা গিরিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাল রাতে এসইউসি আগে ঝামেলা করেছে। গ্রামের লোক মারা গিয়েছে। সেই কারণে এলাকার মানুষ উত্তেজিত হয়ে গিয়েছে।"
আরও পড়ুন-দিলীপ-মুকুলের পরস্পর বিরোধী অবস্থান কি বাংলায় পদ্ম ফোটাতে বাধা?
শুক্রবার রাতে এবং শনিবার সারাদিন কুলতলি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। স্থানীয়দের অভিযোগ, একের পর এক বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাইক জ্বালিয়ে দিয়েছে। বাড়ির জিনিসপত্র লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। এই তান্ডবের সময় পুলিশের কোনও সাহায্য পাননি বলেও অভিযোগ আক্রান্তদের। ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, বেশ কয়েকজনকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন