ছাব্বিশ বছরের ব্যবধান। সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে জঙ্গি আন্দোলন করেছিলেন সেদিনের বিরোধী নেত্রী। এখন তিনি শাসকের কুর্সিতে, এবার লাড়াই ব্যালট পেপার ফেরানোর দাবিতে। সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, ইভিএম-এর বদলে ব্যালট ফিরিয়ে আনার দাবিতে তিনি আন্দোলন শুরু করছেন।
নির্বাচনে ব্যালট পেপার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস। সোমবার নবান্নে দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকের পর তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপধ্যায় বলেন, "গণতন্ত্র বাঁচাও, ইভিএম চাই না ব্যালট ফিরিয়ে দাও। বাংলা থেকে ব্যালট ফেরানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু হবে। সেই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।"
মমতার দাবি, "ভোটের দিন অনেক ইভিএম খারাপ হয়ে গিয়েছিল। নতুন ইভিএমগুলোতে মক পোল করতে দেয়নি। ইভিএম চাই না, ব্য়ালট ফিরিয়ে দাও, এই দাবিতে আন্দোলন শুরু করা হবে।" তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, "মাত্র ২ শতাংশ ইভিএম-এ ভোট মেলাতে দেওয়া হয়েছিল। বাকি ৯৮ শতাংশ ইভিএমে যে প্রোগ্রামিং করে আনেনি তার কোন কানও মানে নেই। এবারের ভোটের ফল মানুষের রায় বলে মানি না"। মমতা এদিন মনে করিয়ে দেন ১৯৯৩ সালে ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে তিনি আন্দোলন করেছিলেন। সেই সময় ১৩ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছিল। এবার আন্দোলন শুরু হবে ব্যালট ভোটের দাবিতে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই তৎকালীন রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সিপিএম-এর 'ছাপ্পা' রুখতে ভোটারদের সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবি-সহ একাধিক ইস্যুতে মহাকরণ অবরোধ করেছিলেন কংগ্রেসকর্মীরা। রাজ্যে তখন ক্ষমতায় জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন বামফ্রণ্ট সরকার। পুলিশের গুলিতে সেদিন রক্তাক্ত হয়েছিল মহানগরের রাজপথ। মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। সেই থেকে রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঠাঁই পেয়েছে ২১শে জুলাই। এবার সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ব্যালট পেপারে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিলেন। সদ্য লোকসভা নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেয়েছে মমতার দল। গতবারের ৩৪টি আসন থেকে তৃণমূলের আসন সংখ্য়া কমে হয়েছে ২২। অন্যদিকে এ রাজ্য-সহ সারা দেশে অভূতপূর্ব উত্থান ঘটেছে বিজেপির। এবার বাংলা থেকে মোট ১৮টি আসনে জিতেছে মোদী-শাহর দল। আর এসবের পরই ইভিএম-এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ব্যালট ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পাশাপাশি সংগঠন চাঙ্গা করতে ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসকেই বেছে নিয়েছে তৃণমূল। ২১ জুলাই উপলক্ষ্যে এবার জনসংযোগ যাত্রা শুরু করতে চলেছে তৃণমূল। তৃণমূলনেত্রী জানান, ২১ জুলাই পর্যন্ত জনসংযোগ যাত্রা করবে দল। সাগর থেকে পাহাড়, কলকাতা থেকে জঙ্গলমহল এই যাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। সাংসদ-বিধায়করা বাড়ি বাড়ি যাবেন।
প্রসঙ্গত, বিজেপির এই উত্থানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে রীতিমতো বিচলিত তা ইতিমধ্যে স্পষ্ট। রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতার ব্যালটের দাবি সফল হবে কি না তা বড় কথা নয়। কিন্তু, আন্দোলনের চেনা রাস্তায় ফিরে আসাটাই এখন মমতার পক্ষে একমাত্র রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার পথ। এর আগে নৈহাটিতে ঘর ছাড়া তৃণমূলকর্মীদের ঘরে ফেরাতে মমতা জঙ্গি আন্দোলনের কায়দায় মঞ্চ প্রস্তুত করে স্মৃতি উস্কে দেওয়া (অতীত আন্দোলনের) বক্তৃতা রেখেছিলেন। এরপর সোমবার ফের নিজেই ১৯৯৩ সালের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নয়া আন্দোলনের ডাক দিলেন। ফলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আজকের শাসক মমতা যে তাঁর অতীত অবতারেই ভরসা রাখছেন তা কার্যত নিশ্চিত।