শেষ পর্যন্ত 'বেসুরো' বৈশালী ডালমিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করল তৃণমূল কংগ্রেস। দল বিরোধী কাজের অভিযোগ ছিল বালির তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে। শুক্রবার তা খতিয়ে দেখতে বৈঠক করে তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সদস্যরা। তারপরই এদিন এই কড়া সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে রাজ্যের শাসক দল।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বৈশালী ডালমিয়ার বহিষ্কার প্রসঙ্গে বলেন, 'ভোটের আগে যেভাবে তিনি কথা বলছিলেন সেটা দলের পক্ষে মেনে নেওয়া যায় না। দলের নেতা-কর্মীরা এগুলোকে সমর্থন করে না। ফলে সাংগঠনিকভাবে তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
দলের পদক্ষেপ নিয়ে বৈশালী ডালমিয়া বলেন, 'আমি যে বলেছিলাম দলের মধ্যে ঘুন ধরেছে তা এদিনের সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট। যাঁরা দলের মধ্যে থেকে বাজে আচরণ করছেন, দলেকে হেয় করছেন- তাঁরাই বহাল তবিয়তে থাকছেন। কেন সবাই চলে যাচ্ছে সেটা নেতাদের মনে হচ্ছে না! মানুষের হয়ে কথা বলাটা কী দল বিরোধী কাজ। আমি সবসময় মানুষের পাশেই থাকব।'
আরও পড়ুন- ‘মুখ্যমন্ত্রী সৌজন্য দেখাননি, অপমানেই ইস্তফা’, কাঁদতে কাঁদতে জানালেন রাজীব
দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গত বেশ কয়েক মাস ধরেই সরব হয়েছিলেন বালির তৃণমূল বিধায়ক। প্রথমে হাওড়া পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলরদের সঙ্গে বিধায়কের মনোমালিন্য দিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। পরে, বালিতে টিম পিকে-র বৈঠক ঘিরে সেই বিরোধ বাড়তে থাকে। প্রকাশ্যেই দলে প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বৈশালী।
দলের সঙ্গে যখন বৈশালী ডালমিয়ার দূরত্ব বাড়ছে তখনই রাজ্যপালের সঙ্গে রাজভবনে গিয়েও সাক্ষাৎ করতে দেখা যায় বালির বিধায়ককে। দলত্যাগীদের যখন 'মীরজাফর-বেইমান' বলে তোপ দাগছে তৃণমূল, তখন প্রকাশ্যেই দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন তিনি। ফলে অস্বস্তি বাড়ে জোড়া-ফুল শিবিরের।
তারপর, গত মাসে লক্ষ্মীরতন শুল্কার মন্ত্রিত্ব ত্যাগ ও দল থেকে ইস্তফা প্রসঙ্গেও জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলেছিলেন বৈশালী। আজ, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফার পরও দলের নেতাদেরকেই দায়ী করেন এই বিধায়ক। হাওড়া জেলার তৃণমূল চেয়ারম্যান অরূপ রায়ের বিরুদ্ধেও একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
আরও পড়ুন- ‘দেখ তৃণমূল কেমন লাগে’, রাজীব মন্ত্রিত্ব ছাড়তেই কটাক্ষ শুভেন্দুর
বৃহস্পতিবারই বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই সংবাদমাধ্যমে রাজীবের সমর্থনেই মুখ খোলেন বৈশালী। বলেন, 'রাজীবদার পদত্যাগে দলের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। এটা সাধারণ মানুষেরও ক্ষতি। এমন একজন দায়িত্ববান মন্ত্রীর ইস্তফা দলের জন্য সত্যিই দুশ্চিন্তা এবং অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। সত্যিই কাজ করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। প্রত্যেকেই দলকে ভালবাসেন। কিন্তু আত্মমর্যাদাও তো রয়েছে। যাঁদের আত্মসম্মান রয়েছে, তাঁরা দিনের পর দিন এই অপমান মেনে নিতে পারেন না।'
বৈশালীর বহিষ্কার নিয়ে হাওড়া জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অরূপ রায় বলেছেন, ‘সঠিক সিদ্ধান্ত। দলের বিরুদ্ধে কথা বলে যাঁরা দলের ক্ষতি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কারও কোনও ব্যক্তিগত অভিযোগ থাকতেই পারে। সেটা দলের ভিতরেই বলা উচিত।’
আরও পড়ুন- রাজীবকে ‘ঝরা পাতা’র সঙ্গে তুলনা পার্থর, তীব্র কটাক্ষ সৌগত-কল্যাণ-কুণালের
বিগত বেশ কিছু দিন ধরেই গুঞ্জন বৈশালী ডালমিয়া তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। বিধায়কের একের পর এক প্রকাশ্যে দলীয় লাইনের বাইরে গিয়ে মন্তব্য সেই জল্পনাকে উসকে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত বৈশালীকে বহিষ্কার করে ভোটের আগে দলের 'বেসুরো' কড়া বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করল তৃণমূল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন