২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে ঘর ভাঙানোর খেলায় কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। শুক্রবার পুরুলিয়ার এক জেলা পরিষদ সদস্য ও শনিবার দুই গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সঙ্গে কয়েকজন স্থানীয় বিজেপি নেতাও রয়েছেন। বিজেপির দাবি, পুলিশি জুজু দেখিয়ে দল বদলাতে বাধ্য করছে তৃণমূল। পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব বলেছে, টক্কর হবে সমানে সমানে। আর ওদের অনেক বড় নেতা যোগ দেবে বিজেপিতে।
জঙ্গলমহলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে বেগ দিয়েছে গেরুয়া শিবির। এবার বোর্ড গঠনের আগে ফের শুরু হয়েছে দলবদলের খেলা। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, কেউ অভিমান ভেঙে, কেউবা রাজ্যের উন্নয়নে সামিল হতে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছে। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে গিয়ে মমতা ববন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন জানিয়ে এসেছেন জঙ্গলমহল যেন তাঁকে বিশ্বাস করে। তিনি জঙ্গলমহলকে হারাতে চান না। জঙ্গলমহল অনেকটাই প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। দলের রাজ্য নেতৃত্ব দফায় দফায় ছুটছেন সেখানে। এমনকী প্রশাসনিক স্তরে ঢালাও প্রকল্প চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পদ্মফুলে জয়ের পরেও কেন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন ? তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের দাবি, “গরীব মানুষের কাজ করতে হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গ ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। অন্য রাজনৈতিক দলের চরিত্র সহজেই বোঝা যাচ্ছে, তাই তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছে। এই যোগ দেওয়া চলবে। ৮টা ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েত সমিতিও আশা করছি তৃণমূলের দখলে থাকবে।’’ তাঁর বক্তব্য, “হতে পারে অভিমানে অনেকে চলে গিয়েছিলেন। ভুল বুঝতে পেরে সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে ফিরে আসছেন।’’ দুদিনে বিজেপির তিন জয়ী প্রার্থী যোগ দিলেন তৃণমূলে। তিনি জানান, গ্রামপঞ্চায়েতের দুই বিজেপি সদস্য শনিবার পদ্ম ছেড়ে জোড়াফুলে যোগ দিয়েছেন। এঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিজেপি যুব মোর্চার স্থানীয় সভাপতিসহ অন্যরা। শুক্রবার তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন জেলা পরিষদ ৩১-এর জয়ী বিজেপি সদস্য লিপিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “ওরা কেউ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছে না। ওদের পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসছে। ভয়ে যোগ দিচ্ছে। তাই জয়ী সদস্যদের অন্যত্র লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে।’’ তবে দলবদলের খেলায় বিজেপি যে একেবারে হাত গুটিয়ে বসে নেই তা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। দলের সভাপতির কথার সূত্র ধরেই তাঁর দাবি, “আমাদের লোকেদের নামে পুলিশ মাথ্যা মামলা করছে। গ্রেপ্তার করছে। মালদা, মুর্শিদাবাদসহ অন্য জেলার বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। জেলা পরিষদের প্রার্থী লিপিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী গ্রেপ্তার হয়ে রয়েছেন। তা সত্বেও আমরা ৯০ টা গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান করব।’’ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর জঙ্গলমহল এলাকার বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এই দলবদলের খেলায় বিজেপি যে ছেড়ে কথা বলবে না তা দলের সাধারণ সম্পাদকের কথায় স্পষ্ট। তিনি বলেন, “ওদের অনেক জয়ী প্রার্থী সরে রয়েছে। ওরা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। ওরা যা করছে করুক, কিন্তু শীঘ্রই ওদের বড় নেতারা আমাদের দলে যোগ দেবেন।’’
পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া রয়েছে। তারওপর সামনের বছর লোকসভার নির্বাচন। অভিজ্ঞমহলের মতে, এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কারণ লোকসভায় ভাল ফল করতে না পারলে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে লবডঙ্কা অবস্থা হবে সেই রাজনৈতিক দলের। এবার এই খেলায় পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করবে রাজ্য ও কেন্দ্র দুই পক্ষই, এটাই স্বাভাবিক।