শনিবারই জোড়া-ফুলে বড়সড় ভাঙন ধরিয়েছে পদ্ম বাহিনী। শুভেন্দু অধিকারী সহ রাজ্যের শাসক দলের সাত বিধায়ক নাম লিখিয়েছেন বিজেপিতে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন তৃণমূলের এক সাংসদ ও প্রাক্তন সাংসদও। এছাড়াও সিপিএম, সিপিআই ও কংগ্রসেরে একজন করে বিধায়কও যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের একাধিক জেলাপরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলরও। মেদিনীপুরে শাহের জনসভায় এই বিপুল যোগদানকে কেন্দ্র করে উচ্ছ্বসিত পদ্ম শিবির। এই ধারা চলবে বলে মনে করছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। আর তাতেই যেন বাংলা জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছে মুরলীধর সেন লেনের নেতারা।
এক নজরে দলত্যাগীদের রাজনৈতিক পরিচয়-
শুভেন্দু অধিকারী (নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী)- ২০ বছর বয়সেই চাত্র পরিুষদের নেতা। ১৯৯৬ সালে সমবায় অন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নিজেকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠার হাতেখড়ি। এর তিন বছর পরে শুভেন্দু অধিকারী নাম লেখান তৃণমূলে। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় মমতার অন্যতম বিশ্বাসভাজন ছিলেন শুভেন্দু। ২০১১ সালে তৃণমূলের জয়ের পিছনেও তাঁর ভূমিকা স্মরণযোগ্য বলে মনে করে তৃণমূলের একাংশ।
২০০৯ ও ১৪ সালে তমলুকের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন শুভেন্দু। পরে ২০১৬ সালের বিধানসভায় নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে দাঁড়ান তিনি। জয় পেয়ে মমতা মন্ত্রিসভার পরিবহণ দফতরের দায়িত্ব পান। এছাড়াও তাঁর হাতে ছিল আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর। ছিলেন একাধিক সরকারি সংস্থার চেয়ারম্যানও।
সুনীল কুমার মণ্ডল (পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল সাংসদ)- বামফ্রন্ট শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মী হিসাবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ওই দলের প্রতীকেই গলসি থেকে ২০১১ সালে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিল। পরে ২০১৪ সালের রাজ্যসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেন তিনি। পরে যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৪ ও ১৯ সালে পূর্ব বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের হয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন সুনীল মণ্ডল। মুকুল রায়ের অনুগামী বলেই পরিচিত এই নেতা।
শীলভদ্র দত্ত (ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক)- প্রথমে ছাত্র পরিষদের নেতা ছিলেন। পরে হাত শিবিরে যোগ দেন। ২০০৬ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০০৯ সালে উত্তর ২৪ পরগনার যুব তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন শীলভদ্র দত্ত। ২০১১ ও ১৬ সালে ব্য়ারাকপুর থেকে তৃণমূলের প্রতীকে লড়ে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তাপসী মণ্ডল (সিপিএম বিধাক, হলদিয়া)- ২০১৬ সালে বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএমের হয়ে লড়ে হলদিয়া থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তাপসী মণ্ডল।
অশোক দিন্দা (সিপিআই বিধায়ক, তমলুক)- বামেদের খারপ সময় পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিআইয়ের মুখ হয়ে উঠেছিলেন অশোক দিন্দা। ২০১৬ সালের বিধানসবা ভোটে তমলুক থেকে ভোটে জয় পান তিনি।
সুদীপ মুখোপাধ্যায় (কংগ্রেস বিধায়ক, পুরুলিয়া)- কংগ্রেসের হয়ে ২০১৬ সালে পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয় পেয়েছিলেন সুদীপ মুখোপাধ্য়ায়।
সৈকত পাঁজা (তৃণমূল বিধায়ক, মন্তেশ্বর)- ২০১৬ সালে মন্তেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক সজল পাঁজার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জোড়া-ফুলের প্রার্থী হন সৈকত। জয় পান। গত তিন মাস ধরে দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
দিপালী বিশ্বাস (তৃণমূল বিদায়ক, গাজোল)- ২০১৬ সালে গাজোল থেকে সিপিএম বিধায়ক নির্বাচিত হন দিপালীদেবী। শুভেন্দু অধিকারী মালদার তৃণমূল পর্যবেক্ষক হওয়ার পরই ওই বছরই জুলাইতে শাসক দলে যোগ দেন দিপালী বিশ্বাস। শনিবার যোগ দিলেন বিজেপিতে।
সুকরা মুণ্ডা (তৃণমূল বিধায়ক, আলিপুরদুয়ার)- কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি আলিপুরদুয়ারে ২০১৬ সালে তৃণমূলের হয়ে লড়ে বিধায়র নির্বাচিত হয়েছিলেন সুকরা মুণ্ডা।
বিশ্বজিৎ কুণ্ডু (তৃণমূল বিধায়ক, কালনা)- ২০১১ ও ১৬ সালে ঘাস-ফুলের বিধায়ক তিনি। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বলেই দলের অন্দরে পরিচিত। গত বুধবার সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে যে তৃণমূলের 'বিদ্রোহী'দের বৈঠক হয়েছিল তাতে শামিল ছিলেন বিশ্বজিৎ কুণ্ডু।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী)- প্রথম মমতা মন্ত্রিসভার বস্ত্রমন্ত্রী ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। কিন্তু চিটফান্ড কেলঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়ানোয় ক্যাবিনেট থেকে বাতিল করা হয় তাঁকে। ২০১৬ সালে বিষ্ণুপুর কেন্দ্র থেকেই ভোটে হেরে যান তিনি।
দশরথ তিরকে (প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ, আলিপুরদুয়ার)- ২০১৪ সালে আরএসপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েই সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে পাঁচ বছর পরে একই কেন্দ্রে বিজেপির জন বার্লার কাছে পরাজিত হন তিনি। আরএসপির হয়ে কুমারগ্রাম বিধানসভা থেকে ২০০১, ০৬ ও ১১ সালে জয় পান তিনি। ছিলেন বাম মন্ত্রিসভার পূর্ত দফতরের প্রতিমন্ত্রী।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন