তিনি হিন্দিতেই স্বচ্ছন্দ। তাই সেই ভাষাতেই বক্তব্য রাখবেন এটাই সঙ্গত। কিন্তু বক্তব্যের মাঝে মাঝেই ছিল "সোনার বাংলা" গড়ার ডাক। তবে তা নতুন না, বাংলায় যে কোনও দলের রাজনীতিকরাই প্রতিশ্রুতি দিতে গেলে সোনার বাংলার কথাই বলে থাকেন।
এদিন অমিত শাহর মূল বক্তব্যের সুর ছিল বাংলা দখল। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়ে বাংলা শাসন করতে চায় পদ্মশিবির। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ছাড়া বঙ্গ বিজেপির পক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয়। তা-ও জানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই এরাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বকে চাঙ্গা করতে এমন একটা জনসভার প্রয়োজন ছিল। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই বাংলায় রাজনৈতিক যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি, তাই নরেন্দ্র মোদী নয়, দলের সভাপতি জগত্প্রকাশ নাড্ডাও নয়, বক্তা সেই অমিত শাহই। এ রাজ্য দলের খোলনলচে বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি অন্যদের থেকে একটু বেশি অবগত।
দেশের এহেন কোনও প্রকল্প নেই যা এদিন অমিত শাহ বলেননি। একের পর প্রকল্প শুধু বলেননি, কতজন পেয়েছেন, কত টাকা বরাদ্দ- একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি। বাংলা কত টাকা পেয়েছে। কোন কোন প্রকল্প বাংলা পায়নি। তার জন্য দায়ী কে? এসব তুলে ধরার উদ্দেশ্য সেই একটাই। তোমরা আমাদের নির্বাচিত কর, তাহলে আরও প্রকল্প পাবে। আরও বিকাশ হবে। বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় নেই, তবু দিল্লি থেকে কত কাজ করছে মোদী সরকার, এমনটাই বোঝাতে চেয়েছেন শাহ। এরপর বাংলায় ক্ষমতায় এলে যে আরও অনেক কিছু করা হবে, মূলত সেই প্রতিশ্রুতিই ছিল অমিত শাহর কণ্ঠে। ফলে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম রাজনৈতিক জনসভা হিসাবে এটাকে চিহ্নিত করাই যায়।
মজার বিষয়, সারা দেশে ৩০৩টি লোকসভার আসন পেয়েও বাংলার ১৮ জন সাংসদ নাকি খুব গুরুত্বপূর্ণ! কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার গড়তে এমন কথার মূল্য যে নেই সে প্রমাণও বিজেপি দিয়েছে। ১৮ জনের মধ্যো মাত্র দুজন মন্ত্রী হয়েছেন, তা-ও অর্ধমন্ত্রী। ফলে গুরুত্বটা যে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক তা নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকতে পারে না। কিন্তু এসব বলে বাংলাকে কতটা গুরুত্ব দেয় বিজেপি তা এদিন ঠারে ঠারে বোঝাতে চেয়েছেন দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি। আদিবাসী, মতুয়া, নমশূদ্র, কৃষক, গরীব মানুষের কথা উঠে এসেছে অমতি শাহর বক্তব্যে। লক্ষ্য একটাই।
তিনি অভিযোগ করেছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ঠাট্টা করেছেন মমতা। পরিস্থিতি, পরিবেশকে হাতছাড়া করতে চাইছে না বিজেপি। করোনা আবহে নানা অব্যবস্থার কারণে পরিযায়ী শ্রমিকরা তেতে রয়েছেন। কেউ এরাজ্যের ওপর, কেউ বা যেখানে কাজ করছিলেন সেই রাজ্যের সরকারের ওপর। এটা সত্যি। তাঁদের পুঞ্জিভুত ক্ষোভকে জিইয়ে রাখতে চাইছে বিজেপি। সরকারি হিসেবে ১০ লক্ষের ওপর শ্রমিক ফিরেছে। মোট পরিযায়ী সংখ্যাটা আরও বেশি। তাঁদের পরিবার আছে। লক্ষ্য সেই ভোট ব্যাংক।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন