দলের সর্বভারতীয় সভাপতি নির্দেশ দিয়েছেন, ৪২-এ ২২ চাই। তা শুনে আমতা-আমতা করেছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সব ধরনের সাহায্য করতে তাঁরা প্রস্তুত, কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্য থেকে সর্বাধিক আসন পেতে হবে। রথযাত্রার মাধ্যমে লোকসভা ভোটের আগে সংগঠন মজবুত করতে তৎপর দলীয় নেতৃত্ব। প্রশ্ন হলো, ৪২ টি আসনে কাদের প্রার্থী করবে বিজেপি? রাজ্যে নেতৃত্বের একটা বড় অংশ আপাতত জয় নিশ্চিত, এমন আসন খুঁজতে ব্যস্ত।
ইদানীং ৬, মুরলীধর সেন লেনে দলের রাজ্য দপ্তরে নেতাদের আনাগোনা বেড়ে চলেছে। প্রার্থী হয়ে ভোটের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে রাজ্যে নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করেছিলেন, তাহলে প্রতি কেন্দ্রে পরিচিত ও হেভিওয়েট প্রার্থীরা থাকবেন। সেক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে 'নেক-টু-নেক ফাইট' অর্থাৎ হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা ভাবা যাবে। তাঁদের ধারনা, এভাবে বাংলায় ভাল ফল করা যাবে। কিন্তু বিজেপির অভ্যন্তরেই প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য নেতৃত্বের সকলেই যদি নিজ নিজ কেন্দ্রে নির্বাচনী ময়দানেই সর্বক্ষণ থাকেন, তাহলে রাজ্যে নির্বাচন পরিচালনা করবেন কারা?
আরও পড়ুন: দলবদলের প্রতিযোগিতায় বিতর্ক গেরুয়া শিবিরে
লোকসভার প্রার্থী তালিকায় নাম ভাসছে রাজ্য নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসু, শমীক ভট্টাচার্য, সুভাষ সরকার, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়প্রকাশ মজুমদার, দেবশ্রী চৌধুরী, চন্দ্র বোস সহ অধিকাংশ নেতার। এখানেই গোল বেঁধেছে। যাঁরা রাজ্য সংগঠনের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা ভোটে দাড়ালে সামগ্রিক নির্বাচন পরিচালনা করবেন কে? এই নিয়েই এখন চর্চা চলছে দলে।
লোকসভা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকছেন মুকুল রায়। যদিও তাঁর নির্বাচনে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ একদিকে বিধায়ক, অন্যদিকে রাজ্য সভাপতিও। অর্থাৎ দিলীপবাবুর নির্বাচনে দাঁড়ানো নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যদিও প্রার্থী তালিকার চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ।
বিজেপি সূত্রে খবর, অভিনয় জগত থেকে আসা প্রার্থীদের মধ্যে রূপা গাঙ্গুলি ইতিমধ্যেই রাজ্যসভায় রয়েছেন, কিন্তু রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রার্থীপদের দৌড়ে রয়েছেন বলে খবর। সূত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও তাঁকে কথা দেননি প্রার্থী করার বিষয়ে। তবে অভিনয় জগতের তারকাদের প্রার্থী করতে অনীহা রয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতাদের একটা বড় অংশের। যাঁরা প্রকৃতই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাঁদেরই প্রার্থী করতে আগ্রহী বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী বাছাইয়ে সংঘের একটা ভূমিকা থাকাই স্বাভাবিক।
নিজের পছন্দসই লোকসভার আসন পেতে চাইছেন অনেকেই। তা সহজে মিলবে না বলেই ওই সূত্রের দাবি। জঙ্গলমহলের কিছু জায়গায় দলের ফল ভাল হওয়ায় টিকিট প্রার্থীদের একাংশ চাইছেন জঙ্গলমহলের যে কোনও আসনে প্রার্থী হতে। কেউ কেউ 'শিওর সিট'-এর সন্ধান করছেন। কিন্তু তা যে চাইলেই মিলবে না, তা কেন্দ্রীয় নেতারা কথাবার্তায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। দলের রাজ্য সাধারন সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, "লোকসভা নির্বাচনে কারা প্রার্থী হবেন তা ঠিক করবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এখন লোকসভা ভিত্তিক সংগঠন নিয়ে আলোচনা চলছে।"