আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবারই ব্যাপক রদবদল হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসে। সাংগঠনিক পরিবর্তন ঘটিয়ে ২১ জনের রাজ্য সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। আর অনেককে অবাক করে দিয়ে এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন একদা লালগড়ের জনসাধারণের কমিটি নেতা তথা মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছত্রধর মাহাতো। তৃণমূল আমলে দীর্ঘ কারাজীবন কাটিয়ে কিছুদিন আগেই মুক্তি মিলেছে ছত্রধরের।বকাঙ্ঘুষো শোনাও যাচ্ছিল গত লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে হারিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধার করতে ছত্রধরকেই তলায় তলায় ব্যবহার করত তৃণমূল। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের রাজ্যস্তরের কমিটিতে ছত্রধরের পদপ্রাপ্তি সেই কানাঘুষোকেই সিলমোহর দিল।
তৃণমূল সুপ্রিমোর তাঁর উপর এই আস্থা ধরে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছত্রধর নিজেও। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, "এটি একেবারেই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। দলকে ঘুরে দাঁড়াতেই হত। রদবদলেরও প্রয়োজন ছিল। আমি জঙ্গলমহলের মানুষের থেকে অভূতপূর্ব সমর্থন পেয়েছি। আমি নিশ্চিত তৃণমূল কংগ্রেস আবার ক্ষমতায় আসবে।"
প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং ঝাড়্গ্রাম এলাকা জঙ্গলমহল হিসেবে পরিচিত। একদা এই এলাকা মাওবাদী কার্যকলাপে ত্রস্ত থাকত। সেই সময়কার জঙ্গলমহলের আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ ছিলেন এই ছত্রধর মাহাতো। বৃহস্পতিবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা তাঁকে রাজ্য সমন্বয় কমিটির সচিব পদে মনোনীত করায় অভিভূত হয়ে গিয়েছেন ছত্রধর নিজেও। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ছত্রধর বলেন, "বৈঠকের শেষে পার্থ দা (পার্থ চট্টোপাধ্যায়) আমাকে ডেকে বলেন যে দল আমাকে রাজ্য স্টিয়ারিং কমিটিতে রাখছে। দলের তরফে আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা আমি যথাযথভাবে পালন করব। আমি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। তাঁদের জন্য কাজ করতে চাই।"
উল্লেখ্য, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই ঝাড়গ্রামে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করেছে গেরুয়া শিবির। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে বিজেপির কাছে পরাজিত হয় তৃণমূল কংগ্রেস। এহেন পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলে নিজেদের জমি পুনরুদ্ধারে তাই ছত্রধরের উপরেই ভরসা রাখতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘ কারাবাস কাটিয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন জঙ্গলমহলের এই নেতা।
তৃণমূল সূত্রের খবর, ছত্রধর মাহাতো জঙ্গলমহলের পরিচিত মুখ। এই এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তাতেই আস্থা রাখতে চাইছে দল। তাই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে একদা লালগড় আন্দোলনের ‘মুখ’কেই তৃণমূলের মুখ করতে উদ্যোগী হয়েছে ঘাসফুল শিবির। ছত্রধরের দীর্ঘদিনের কাছের মানুষ দিলীপ হেমব্রম বলেন, "এটা খুব ভাল সিদ্ধান্ত। ছত্রধর সেই মানুষ যিনি পারবেন এখানকার মানুষের মন বুঝতে, ভাবনা পরিবর্তন করাতে। নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা ওঁর সহজাত গুণ।"
প্রসঙ্গত, বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে লালগড় আন্দোনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ছত্রধর। শোনা যায় সেই সময় উপজাতি এলাকায় পুলিশের যে ক্যাম্প ছিল তা খালি করতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে দেশদ্রোহিতা, বেআইনি অস্ত্র রাখা এবং বেশ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১১ বছর কারা জীবন কাটিয়ে সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া ছত্রধর জঙ্গলমহলের রুক্ষ মাটিতে ঘাসফুল ফোটাতে কতটা সফল হন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনীতি কুশীলবরা।
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন