ফিরেছেন মোর্চা নেতা বিমল গুরুং। বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ করে তৃণমূলকে সমর্থনের ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে নিজেদের শক্তি দেখিয়ে দফায় দফায় কালিম্পং, মিরিখে সভা করছেন গুরুং বিরোধী মোর্চা নেতা বিনয় তামাং। শীতেও উষ্ণতা বাড়ছে পাহাড় রাজনীতির। এই পরিস্থিতিতে জলপাইগুড়ির সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, 'পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান আমরাই করব।'
দক্ষিণবঙ্গের সভার মত উত্তরেও গেরুয়া দলকেই নিশানা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। ভোটের আগে পাঁচ বছরের ২ কোটি চাকরি, প্রত্যেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকার প্রতিশ্রিতি দিয়েছিল মোদী সরকার। সেই প্রতিশ্রুতি এখনও পূরণ না হওয়া বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মমতা। কেন প্রতুশ্রুতি পূরণ হল না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। কটাক্ষের সুরে বলেন, 'বিজেপির প্রতিশ্রুতি মানে প্রতারণা।'
এরপরই গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সাফ কথা, '২০১৪-১৯ সালের লোকসভায় বিজেপি বাংলা ভাগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভোট এলেই ওরা গোর্খাল্যান্ডের প্রতিশ্রুতি দেয়। ফলে ভোট পেয়ে জিতেছে। আমি বলিনি তাই ভোটও পাইনি। কিন্তু, এখন ওরা বিজেপির নাটক বুঝতে পেরেছে। এই জন্য দার্জিলিংয়ের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। পাহাড়-সমতলে লড়াই লাগিয়ে লাভ হবে না। আমি চাই পাহাড়-তরাই নিজেদের মতো করে ভাল থাক। আমরাই পাহাড়ের স্থায়ী সমাধান করব।' তবে এ দিন একবারও বিমল গুরুংয়ের নাম মুখে নেননি মুখ্যমন্ত্রী।
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রশ্নে এ দিন বিজেপির চা বাগান খোলার আশ্বাস নিয়েও মুখর ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'বিজেপি সবচেয়ে বড় ডাকাত, চম্বলের বড় বড় ডাকাত। ওরা নতুন একটা ধর্ম এনেছে, দাঙ্গা ধর্ম। বিজেপি বলেছিল জিতলে ৭টা চা বাগান খুলে দেবে। কিন্তু সেটা কি খোলা হয়েছে? কেন্দ্র অধিগ্রহণ করবে বলেছিল।' এরপরই চা বাগান শ্রমিকদের প্রতি তাঁর সরকারের কাজের খতিয়ান পেশ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, 'চা সুন্দরী প্রকল্প হয়েছে। ৩৭০ চা বাগনের শ্রমিকদের পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে।। আরও হবে। বড় বড় ভাষণ দিলেই হয় না।'
গত লোকসভায় উত্তরবঙ্গে কার্যত ধরাশায়ী হয়েছে তৃণমূল। ৮টি আসনের মদ্যে একটিও মেলেনি। এবার বিধানসবা ভোটের আগেও উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকজন বিধায়ক 'বেসুরো'। দল ছেড়েছেন কোচবিহারের মিহির গোস্বামী। চা বাগান এলাকায় হিন্দি ভাষীদের বাস। ফলে পদ্ম বাহিনী সেখানে সহজেই ফুল ফোটাতে পারে বলে আশঙ্কা।
অন্যদিকে, পাহাড়বাসীর মধ্যে বিনয় তামাংদের প্রভাব একছত্র নয়। লোকসভাতে বুঝেছে তৃণমূল। তাই বিমল গুরুংয়ের ফেরাও বিরোধিতা করা হয়নি। উল্টে বিজেপি-বাং-কংগ্রেসের কটাক্ষ সত্ত্বেও তাঁকে পুঁজি করেই এখন পাহাড় জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাই এদিন বিজেপির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে ধরে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন তুলেছেন গেরুয়া দলের গোর্খাল্যান্ড প্রতিশ্রুতি ও চা বাগান খোলার আশ্বাস নিয়ে। প্রতিশ্রতি রাখার কথা বলে বিধানসভায় তৃণমূলকে জাতানোর আর্জি জানিয়েছেন পাহাড়-তরাইবাসীর কাছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন