বেসরকারি ট্রাস্টের হাতে রাজ্যের অন্তত ২০টি সরকারি স্কুল তুলে দেওয়ার ইস্যুতে এবার সরাসরি বিবাদ বাঁধল ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মাণিক সরকার এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের মধ্যে। পাশাপাশি, কিছু গ্রামীণ ব্লক উন্নয়ন এলাকায় একাধিক স্কুলের মিড-ডে মিল প্রকল্প হস্তান্তরের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে।
এই প্রেক্ষিতে একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মাণিক সরকার বলেছেন, "...সরকারের এই দুটি সিদ্ধান্তই ত্রিপুরার শিক্ষামনস্ক জনগণের শিক্ষার প্রসার এবং শিক্ষার জন্মগত অধিকারের স্বার্থে দীর্ঘ লড়াই, এবং সেই লড়াইয়ের মাধ্যমে অর্জিত ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পরিপন্থী..."
বর্ষীয়ান এই কম্যুনিস্ট নেতা এবং সাংসদ সাবধান করে দিয়েছেন এই বলে, যে এই সংস্কার "শিক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বিধিবদ্ধ কর্তব্য এড়িয়ে গিয়ে বেসরকারি মালিকানাধীন করে দেওয়ার ইঙ্গিত"। এই পরিকল্পনাকে অত্যন্ত বিরল আখ্যা দিয়ে মাণিকবাবু বিপ্লব দেবের সরকারকে অনুরোধ করেন যেন এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে সকলের জন্য জনশিক্ষা নিশ্চিত করা হয়। তাঁর বক্তব্য, সরকারি স্কুলের বেসরকারিকরণের ফলে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা আর পড়তে পারবে না সেখানে।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় ইসকনের হাতে স্কুল তুলে দেওয়া হচ্ছে কেন
মিড-ডে মিল পরিচালনার দায়িত্ব কোনও একটি এজেন্সির হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করে মাণিকবাবু বলেন, এর ফলে এই প্রকল্পের অধীনে এযাবতকাল কাঁচা মাল সরবরাহকারি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিপন্ন হয়ে পড়বেন।
মাণিকবাবুর বিবৃতি প্রকাশ পাওয়ার পরেপরেই তার তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, এর আগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে কোনও ধারণা ছিল না। বর্তমান সংস্কারমূলক সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য, রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা। তাঁর জবাবে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বেশ কিছু স্কুলে শূন্য বা তার কাছাকাছি ছাত্রসংখ্যা থাকায় সেগুলি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু স্কুলে ছাত্রসংখ্যা দশেরও কম। এই স্কুলগুলিকে একটি দাতব্য সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে যাতে সেগুলি ইংলিশ-মিডিয়াম স্কুলে পরিণত করা যায়, এবং করদাতাদের টাকায় তৈরি সম্পত্তির সদ্ব্যবহার করা যায়।
রাজ্যের প্রাক্তন বামফ্রন্ট সরকারের সমালোচনা করে বিপ্লববাবু বলেন, "বদ্ধমূল কিছু অভিজাতদের স্বার্থ" রক্ষার্থে বাস্তবায়ন করা হয় নি এডুকেশন অ্যাক্ট ২০০৯-এর ১২ (১) খ ধারার, যে ধারার আওতায় সমস্ত বেসরকারি স্কুল আর্থিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণীর ২৫ শতাংশ পড়ুয়া ভর্তি করতে দায়বদ্ধ।
আরও পড়ুন: ৮৬ শতাংশ আসন বিনাযুদ্ধে দখল বিজেপি-র! সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব ত্রিপুরার বাম
এবছরের জুন মাসে ত্রিপুরার শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান যে একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, রাজ্যের ৪,৩৯৮ টি সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের মধ্যে ১৪৭ টি স্কুলে রয়েছে দশজনের চেয়ে কম পড়ুয়া, এবং ১৩ টিতে একজনও পড়ুয়া নেই। তাঁর কথায়, পর্যাপ্ত পরিকল্পনা না করেই চালু করা হয়েছিল বেশিরভাগ স্কুল, যার ফলে সেগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ছাত্রছাত্রী আকর্ষণ করতে পারে নি।
এর মধ্যে ২০টি স্কুলের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসকনের (ISKCON) হাতে, শর্তসাপেক্ষে পাঁচ বছরের জন্য। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে বাকি স্কুলগুলির দায়িত্ব যোগ্যতা বিচার করে অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়া হবে।