ভোট পরবর্তী হিংসার জের, ‘জ্বলছে’ ত্রিপুরা! ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল। হামলা চালানো হয় প্রতিনিধি দলের সদস্য’র ওপরেও। কংগ্রেস ও বামের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘর-দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে! বিষয়টি নিয়ে সংসদে 'ঝড় তোলার' হুঁশিয়ারি কংগ্রেসের।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে, ত্রিপুরার নেহালচন্দ্রনগরে প্রায় ২০টি দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সমস্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিম’ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেই সময় এঁদের ওপরেও হামলা চালানো হয়। অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। ১২ মার্চ পর্যন্ত রাজ্যে থাকবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তার পরই রিপোর্ট পেশ করা হবে। আগামী ১৩ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনে বিষয়টি তোলা হবে বলেই জানানো হয়েছে বাম-কংগ্রেসের তরফে।
উত্তর পূর্বের তিনটি রাজ্য (North East States Assembly Election) ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের ফলাফলও সামনে এসেছে। এই ফলাফল সামনে আসার পরে, ত্রিপুরায় ভোট-পরবর্তী একাধিক হিংসার ঘটনা সামনে আসছে। এই ঘটনার তদন্তের জন্য, একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়, শুক্রবার দলের সদস্যরা আগরতলায় পৌঁছায়। এই দলে রয়েছেন বাম ও কংগ্রেসের সাংসদ ও বিধায়করাও। ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে কিছু অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা প্রতিনিধি দলের ওপর হামলা চালায়।
অসম কংগ্রেস সাংসদ আবদুল খালিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলের অন্যতম সদস্য। তিনি অভিযোগ করেন, ‘হামলাকারীরা যারা দলের সদস্যদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করে তারা ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মী। হামলাকারীরা ৩-৪টি গাড়িও ভাংচুর করে বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় পুলিশ কিছুই করেনি। ত্রিপুরায় আইনের শাসন নেই’।
এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশের ডিজি জানিয়েছেন, ‘ঘটনায় কোন হতাহতের খবর মেলেনি। তবে হামলার জেরে ২-৩টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পাশাপাশি অন্যান্য হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের খোঁজে চলছে তল্লাশি অভিযান’।
আরও পড়ুন: <‘গণতন্ত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করছে মোদী সরকার’, লালু পরিবারের ওপর ইডি হানায় গর্জে উঠলেন খাড়গে >
এই বিষয়ে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওও শেয়ার করেছে। তিনি এক ট্যুইট বার্তায় লিখেছেন- 'আজ ত্রিপুরার বিশালগড় এবং মোহনপুরে কংগ্রেস নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল পৌঁছালে বিজেপির ‘গুন্ডা’রা দলের সদস্যদের আক্রমণ করে। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে থাকা পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে’।
গত ২রা মার্চ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরে যে হিংসা রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তার তদন্তে গঠন করা হয় একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। সিপিআই(এম) বলেছে যে বাম এবং কংগ্রেসের একটি যৌথ দল এদিন পশ্চিম ত্রিপুরা, সিপাহিজালা সহ একাধিক অঞ্চলের সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান সেখানে প্রতিনিধি দলের সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়।
সিনিয়র সিপিআই(এম) নেতা রাখাল মজুমদার বলেছেন ‘প্রতিনিধি দলটি নেহালচন্দ্রনগর বাজারে পৌঁছলে দুষ্কৃতীরা 'ভারত মাতা কি জয়' স্লোগান তুলে আক্রমণ করে। একটি গাড়ির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আরও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে’। প্রতিনিধি দলের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে সিপিআই(এম) অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে এমন ঘটনা সামনে আসার পর শান্তি বজায় রাখতে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা।
কংগ্রেস নেতা অজয় কুমারের অভিযোগ, 'ত্রিপুরায় অরাজকতা চলছে। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি এবং তাদের জন্য লড়াই করব। বাড়ি-ঘর-দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, এটাই বিজেপি ও আরএসএসের সংস্কৃতি। আমরা বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করব এবং এর বিরোধিতা করব'।